৫৬ বছর ধরে চুল কাটেন বৃদ্ধ ভবতোষ শীল

খোলা আকাশের নিচে পিঁড়ির ওপর বসিয়ে চুল–দাড়ি কাটেন ভবতোষ শীল
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের ৩০০ বছরের পুরোনো চকবাজার। মেঘনা নদীর তীরঘেঁষা এই বাজারের জরাজীর্ণ এক দোকানের ছায়ায় বসে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ভবতোষ শীল এক ব্যক্তির চুল কেটে দিচ্ছেন। খোলা আকাশের নিচে পিঁড়ির ওপর বসিয়েই চলছে কর্মযজ্ঞ। আধুনিক এই যুগে এখনো পুরোনো আদলেই চুল কাটেন ভবতোষ শীল।

ভবতোষ শীলের বয়স এখন ৬৭ বছর। তিনি ৫৬ বছর ধরে এই বাজারে বসেই চুল কাটছেন। ভবতোষ শীল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নের বালিখোলা গ্রামের বাসিন্দা। স্ত্রী অনিমা রানী শীলসহ ভবতোষের চার মেয়ে রয়েছে। পরিতোষ শীল নামের ভবতোষের এক ছেলে ছিল। তবে ২১ বছর বয়সে পরিতোষ মারা যান। তাই সংসারের খরচ জোগাতে তিনি এখনো নরসুন্দরের কাজ করেন।

উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়নেও ভবতোষের বাড়ি হলেও পাশের চাতলপাড় ইউনিয়নের চকবাজারে চুল কাটার কাজ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের কয়েক বছর আগে থেকে তিনি চুল কাটাসহ শেভ করার কাজ শুরু করেন। ১১ বছর বয়সে বাবা গোত্রমোহন শীলের কাছে এই কাজে হাতেখড়ি হয়।

ভবতোষ বলেন, ‘সংসারে অভাব-অনটন। চুল কেটে যা পাই, তাতেই সংসার চলে। তেমন লাভ হয় না, তাই দোকান দিতে পারি না। দিনে মোটামুটি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় করতে পারি। মানুষ এখন হাইফাই (আধুনিক) দোকানে চলে যায়। আমাদের কাছে লোক কম আসে। যাঁরা কম টাকায় চুল কাটাতে ও শেভ করতে চান, তাঁরাই আমার কাছে আসেন।’

তবে বর্ষাকালে ভবতোষের দোকানের ঠিকানা পাল্টে যায়। কারণ, মেঘনার ভাঙনে এই বাজারও ভাঙে। তখন যেখানে বসার জায়গা পান, সেখানেই দোকান খুলে বসেন।

ভবতোষ শীল
ছবি: প্রথম আলো

ভবতোষের কাছে বড়দের চুল কাটতে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকা আর শেভ ১৫ টাকা। চুল কাটা ও শেভ করা একসঙ্গে ৪০ টাকা। ছোটদের চুল কাটতে ২০ থেকে ২৫ টাকা করে নেওয়া হয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চুল কাটা ও শেভ করতে আসা মানুষের অপেক্ষায় থাকেন তিনি। দিনে ১০ থেকে ১২ জন ভবতোষের দোকানে আসেন।

ভবতোষ বলেন, ‘সংসারের খরচ চালানোর জন্য আমি ছাড়া আর কেউ নেই। তাই কাজ করে যাচ্ছি। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। তাই ভগবান যত দিন চাইবেন, তত দিন কাজ করব।’

চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবুল কালাম বলেন, ভবতোষ লোকটি খুব সহজ-সরল প্রকৃতির। খুব বিনয়ী ও মিষ্টভাষী। দীর্ঘদিন ধরেই বাজারে চুল কাটেন ও শেভ করেন। তাঁর বাবাও একই পেশায় ছিলেন। এলাকার কিছু মানুষ নিয়মিত তাঁর কাছে চুল কাটাতে এবং শেভ করাতে যান। কারণ, তিনি যত্নের সঙ্গে এই কাজ করেন। আবার টাকাও কম নেন।