৭ পুলিশের বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে ডাকাতির মামলা
স্বর্ণ, নগদ অর্থ, মুঠোফোন ও মালামাল লুট করার অভিযোগে জেলার ব্রাহ্মণপাড়া থানার সাত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে মামলা হয়েছে। উপজেলার চান্দলা গ্রামের আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী সালমা আক্তার এই মামলা করেন। তবে পুলিশ বলছে, বাদীর ভাই একাধিক মামলার আসামি। তাঁকে গ্রেপ্তার করায় ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দেওয়া হয়েছে।
৯ আগস্ট কুমিল্লার ২ নম্বর আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বেগম মিথিলা জাহান নিপা মামলাটি গ্রহণ করে কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেন। একই সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগের তদন্ত করে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার ওই মামলার বিষয়টি জানাজানি হয়। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনার কপি এখনো আমার কাছে আসেনি। আদালতের নির্দেশনা হাতে পাওয়ার পর নিরপেক্ষ তদন্ত করা হবে। তবে আদালতে মামলার বিষয়টি আমি জেনেছি। এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আছে। সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’
মামলায় ব্রাহ্মণপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম, জীবন কৃষ্ণ মজুমদার, কামাল হোসেন, এএসআই কৃষ্ণ সরকার, মতিউর রহমান, পুলিশ সদস্য নুরুজ্জামান ও জামাল হোসেনসহ অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরজি ও সালমা আক্তারের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় বাদীর (সালমা) ভাই লোকমান হোসেনের খোঁজে ব্রাহ্মণপাড়া থানার এসআই সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সাদাপোশাকে একদল পুলিশ চান্দলা গ্রামে তাঁদের বাড়িতে যায়। এ সময় পরিচয় জানতে চাইলে তারা সবাই ব্রাহ্মণপাড়া থানার পুলিশ বলে দাবি করে। এরপর তারা ঘরে প্রবেশ করে বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি করে। একপর্যায়ে বাদী কোনো মামলার পরোয়ানা আছে কি না, তা জানতে চাইলে তারা গালমন্দ করে লাঠি দিয়ে ঘরের শোকেজের গ্লাস ভেঙে ফেলে। এরপর আলমারির চাবি নিয়ে তল্লাশির নামে ড্রয়ারে থাকা নগদ দুই লাখ টাকা, সোনার দুই জোড়া কানের দুল, দুটি হার ও তিনটি আংটিসহ চার ভরি স্বর্ণালংকার এবং মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় তাঁর (বাদী) চিত্কার শুনে পাশের বাড়িতে থাকা তাঁর বাবা মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহাম্মদ খান ও স্বামী আবুল কালাম আজাদ এগিয়ে পার্শ্ববর্তী বাড়ির বিল্লাল খানের দোকানের সামনে আসেন। তখন পুলিশ সদস্যরা আবুল কালামকে দোকানের সামনে থেকে টেনেহিঁচড়ে আটকের চেষ্টা করেন।
এ সময় বাদীর (সালমা) বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহাম্মদ খান পরিচয় দিয়ে বিনা পরোয়ানায় আটকের প্রতিবাদ জানান। তখন এএসআই কৃষ্ণ সরকার তাঁর বাবার মাথায় লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করেন। আঘাতের কারণে জামাল আহাম্মদ খান রক্তাক্ত জখম হন। পুলিশের অন্য সদস্যরা তাঁর স্বামীকেও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করেন। তাঁরা স্থানীয় লোকজনকে গুলির হুমকি দিয়ে তাঁর স্বামী আবুল কালাম আজাদকে আটক করে নিয়ে যান।
জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, বাদীর ভাই হত্যা, ডাকাতি, চুরি, মাদকসহ ৯ মামলার আসামি লোকমান হোসেনকে ৩ আগস্ট গ্রেপ্তার করতে গেলে তাঁরা পুলিশের ওপর হামলা চালান ও মারধর করেন। এ সময় লোকমান পালিয়ে গেলেও পুলিশ তাঁর ভগ্নিপতি নোয়াখালীতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি সালমা আক্তারের স্বামী আবুল কালাম আজাদ, তাঁদের সহযোগী মাদক ও মারামারি মামলার আসামি ইকবাল হোসেন ও এনামুল হকসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১২ জনকে আসামি করে পরদিন থানায় মামলা হয়। ৮ আগস্ট রাতভর পুলিশ অভিযান চালিয়ে লোকমান হোসেন, তাঁর সহযোগী ইসহাক খান, হাবিবুর রহমান, বাবু, হৃদয় মুন্সীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। ৯ আগস্ট তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালতের বিচারক তাঁদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়।
মামলার বাদী সালমা আক্তার বলেন, ‘পুলিশ আমার বাবা, স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের মারধর করে। তারা আমার ঘরে ডাকাতি করে।’
বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমার মক্কেল আদালতে মামলা করেছেন। মহামান্য আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য এসপি মহোদয়কে বলেছেন।’