৮ বছরে অগ্রগতি ৪০ শতাংশ

শোধনাগার ও পানির লাইনের নির্মাণকাজ শেষে কবে নাগাদ মেঘনা নদীর পানি ঢাকাবাসী পাবে, সেটি নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

নারায়ণগঞ্জ থেকে মেঘনা নদীর পানি শোধন করে রাজধানীতে সরবরাহের জন্য ঢাকা ওয়াসা কাজ শুরু করে ২০১৩ সালের অক্টোবরে। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অথচ আট বছর পরে এসে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪০ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরবরাহ লাইন বসানোর চুক্ত করেছে ওয়াসা।

মেঘনা নদীর পানি শোধনের জন্য নেওয়া ঢাকা ওয়াসার এই প্রকল্পের নাম ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই’। এটি ‘গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্প’ নামে বেশি পরিচিত। এই শোধনাগারের পানি ঢাকায় সরবরাহের প্রাথমিক লাইন তৈরির জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না জিও–ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে ঢাকা ওয়াসা। এই চুক্তির আওতায় আগামী তিন বছরে কমবেশি ২৫ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হবে।

শোধানাগার ও পানির লাইনের নির্মাণকাজ শেষে কবে নাগাদ মেঘনা নদীর পানি ঢাকাবাসী পাবে, সেটি নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রকল্পের এমন দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রাথমিক সরবরাহ লাইন তৈরির জন্য ঠিকাদার চূড়ান্ত করতেই লেগেছে ২ বছর ৯ মাস। এত দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়টি অভাবনীয়।

বাস্তব কাজ দরপত্র চূড়ান্তের চেয়ে কঠিন। লাইন তৈরির জন্য চুক্তির মেয়াদ ৩৬ মাস। কিন্তু কাজ শেষ হবে কত দিনে, পাঁচ–ছয় বছরে? প্রকল্প তো নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না।
গোলাম মোস্তফা চেয়ারম্যান,ঢাকা ওয়াসা বোর্ড

গোলাম মোস্তফা বলেন, বাস্তব কাজ দরপত্র চূড়ান্তের চেয়ে কঠিন। লাইন তৈরির জন্য চুক্তির মেয়াদ ৩৬ মাস। কিন্তু কাজ শেষ হবে কত দিনে, পাঁচ–ছয় বছরে? প্রকল্প তো নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না। আগের অভিজ্ঞতা বলে, কাজের সময় বাড়লে প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়বে। এটি একটা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বিষনন্দী পয়েন্টের মেঘনা নদী থেকে পানি আনা হবে সিদ্ধিরগঞ্জের গন্ধর্বপুর এলাকায় নির্মাণাধীন শোধনাগারে। সেখানে শোধন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে তা রাজধানীর বাসায় বাসায় সরবরাহ করা হবে। দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি আসার কথা এই প্রকল্প থেকে। শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। সংশোধিত প্রকল্পে ২ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। ফলে এটি এখন ৮ হাজার ১৫১ কোটি টাকার প্রকল্প।

* এই প্রকল্প থেকে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি আসার কথা। * শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। * সংশোধিত প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা।

গতকাল চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার মাটির উপরিভাগের উৎসের ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হবে। ঋণের টাকায় নেওয়া প্রকল্পের সুদ দিতে হবে। যত দ্রুত পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করা যাবে তত ভালো। সেটি না হলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।

চারটি গুচ্ছের (প্যাকেজ) আওতায় পুরো প্রকল্পের কাজ হবে। এর মধ্যে ৩ নম্বর গুচ্ছের মাধ্যমে বারিধারা থেকে রামপুরা এবং বারিধারা থেকে এয়ারপোর্ট রোড, উত্তরা, গুলশান, বনানী ও কচুক্ষেত এলাকায় পানি সরবরাহের প্রাথমিক পানির লাইন নির্মাণ করা হবে। এই গুচ্ছে ব্যয় ৫১৮ কোটি টাকা। গতকাল এই গুচ্ছের চুক্তিতে সই করেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান ও চায়না জিও–ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট অয় ইয়ং।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না। তাই প্রকল্পের মেয়াদ আরেক দফা আড়াই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।