৮ মাসের মাথায় সড়ক বেহাল

সড়কটি দিয়ে অনবরত চলাচল করছে বালুবোঝাই ১০ চাকার ট্রাক। পাশাপাশি চলছে অসংখ্য ট্রাক্টর।

পঞ্চগড়ের ব্যারিস্টার ইনস্টিটিউট-গোয়ালঝাড় সড়ক সংস্কারের আট মাসের মধ্যে বেহাল হয়ে গেছে। সড়কের পিচঢালাই উঠে গেছে। ধুলায় ছেয়ে গেছে চারদিক। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

সংস্কারের মাত্র আট মাসের মাথায় পঞ্চগড়ের ব্যারিস্টার ইনস্টিটিউট-গোয়ালঝাড় সড়কটি বেহাল হয়ে গেছে। পিচ উঠে সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। গাড়ি চললে ধুলায় ভরে যায় চারপাশ।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে অনেক ট্রাক চলাচল করে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেভাবে মজবুত করে সড়কটি সংস্কার করেনি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরও (এলজিইডি) কাজটি সঠিকভাবে তদারক করেনি।

এলজিইডি পঞ্চগড় কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার ব্যারিস্টার ইনস্টিটিউট-গোয়ালঝাড় সড়কটি সংস্কার করা হয়। ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়কটি সংস্কার করতে ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। মেসার্স বজলুর রহমান নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত বছরের ৩০ মে এ সংস্কারকাজ শেষ করে।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটি পঞ্চগড় শহর থেকে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত। সড়ক দিয়ে অনবরত চলাচল করছে বালুবোঝাই ১০ চাকার ট্রাক। করতোয়া নদীর বালুমহাল ও বিভিন্ন পাথর কোয়ারি থেকে নিয়ে আসা পাথর-বালুবোঝাই ট্রাকের পাশাপাশি চলছে অসংখ্য ট্রাক্টর। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যারিস্টার বাজার থেকে লাঠুয়াপাড়া পর্যন্ত এ দুই কিলোমিটার অংশ বেশি খারাপ। সড়কের এ অংশের পিচঢালাই প্রায় পুরোটা উঠে গেছে। ধুলার কারণে বাড়িঘর ও গাছপালাগুলো বিবর্ণ হয়ে গেছে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, সড়কটিতে অতিরিক্ত ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচল করায় ছোট যানবাহন ও পথচারীরা পড়ছেন বিপাকে। এতে প্রায় প্রতিনিয়তই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। ধুলা থেকে রক্ষা পেতে কিছু কিছু বাড়ি ও দোকানের সামনে ভুক্তভোগীরাই পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন।

এ সড়কে নতুন করে পিচঢালাই দেওয়ার মাত্র আট মাস হয়েছে, তাতেই সড়কটি পাকা কি না, বোঝা যায় না।
নুর মোহাম্মদ, স্থানীয় বাসিন্দা

দোমনী সরকারপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, এ সড়কে নতুন করে পিচঢালাই দেওয়ার মাত্র আট মাস হয়েছে, তাতেই সড়কটি পাকা কি না, বোঝা যায় না। প্রতিদিন শত শত ট্রাক চলাচল করায় আশপাশের বাড়িগুলোর লোকজন ধুলায় টিকতে পারেন না। ছোট সড়ক হওয়ায় দুই দিক থেকে দুটি ট্রাক এলে অন্য কোনো যানবাহন আর পাশ কেটে যেতে পারে না। এর আগে একবার স্থানীয় লোকজন এ সড়কে যেন ১০ চাকার ট্রাক না ঢোকে, সে জন্য আন্দোলনও করেছেন। পরে প্রশাসনের লোকজন এসে আশ্বাস দিয়ে চলে গেছেন কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

সাদ্দাম হোসেন নামের একজন পাথর–বালু ব্যবসায়ী বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ, বালুমহাল সব জায়গাতেই আমাদের টাকা দিতে হয় কিন্তু রাস্তা তো ঠিক করে দেয় না।’

এলজিইডি সূত্র জানায়, সংস্কারকাজ সঠিকভাবে হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় মেট্রিক টন পণ্য নিয়ে গাড়ি যাওয়ার নিয়ম, কিন্তু সড়কটি দিয়ে দিনে ৪০ মেট্রিক টন ওজনের শতাধিক ট্রাক যাতায়াত করছে। এতে সড়কটি নষ্ট হয়ে গেছে।

পঞ্চগড় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামছুজামান বলেন, ওই সড়ক দিয়ে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে। সড়কটি রক্ষায় তাঁরা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে জেলার সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। এলজিইডি সহযোগিতা চাওয়ামাত্রই সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।