'হায় রে মজার তিলের খাজা'

হাতে তৈরি হয় কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা। শহরের মিলপাড়া কারখানায়।  প্রথম আলো
হাতে তৈরি হয় কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা। শহরের মিলপাড়া কারখানায়। প্রথম আলো

‘হায় রে মজার তিলের খাজা খেয়ে দেখলি না মন কেমন মজা; লালন কয়, বেজাতের রাজা হয়ে রইলাম এ ভুবনে, ভাবলি নে মন কোথা সে জন ভাজলি বেগুন পরের তেলে, গুনে পড়ে সারলি দফা করলি রফা গোলেমালে।’

গানের মতোই মজাদার কুষ্টিয়ার ঐতিহবাহী তিলের খাজা। এটা ফকির লালন শাহের কথা ছিল কি না, সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তবে জনশ্রুতি থেকেই তিলের খাজা নিয়ে এমন গান চলে আসছে।

জেলা ছাড়িয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে কুষ্টিয়ার তিলের খাজা। চিনি, তিল ও দুধ দিয়ে তৈরি করা হয় এই খাজা। ৪৬ বছর ধরে কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ায় কয়েকটি কারখানায় সব মৌসুমে এ খাজা তৈরি হয়ে আসছে। হাতে তৈরি এ খাজা রাতে তৈরি হয়ে পরের দিন সকাল থেকে বাজার, বাসস্ট্যান্ড এলাকাতে বিক্রি হয়।

মিলপাড়ার আবদুল মজিদ এলাকার চাঁদ আলী, সাইদুল ইসলাম, ইদিয়ামিন, সরওয়ারসহ আরও কয়েকজন মিলে ৪৬ বছর ধরে কারখানায় তিলের খাজা তৈরির ব্যবসা করে আসছেন। প্রথম দিকে ১৫ থেকে ১৬ জন মিলে এ ব্যবসা শুরু করেছিলেন। অংশীদার ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর কারখানায় মালিকসহ বর্তমানে কাজ করছেন অন্তত ৬০ জন। কারখানায় প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অন্তত ২৫০ কেজি খাজা তৈরি হয়। এসব খাজা পাইকারি ও খুচরা হিসেবে বিক্রি করেন তাঁরা। চিনি ও দুধ স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করেন। তিল যশোর ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে আনা হয়। তবে ভালো মানের তিল পাহাড়ি অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করেন তাঁরা। প্রতি কড়াইয়ে ৭ কেজি চিনি, দুধ মেশানো পানি আধা লিটার, পানি ৪ লিটার, দেড় কেজি তিল আর প্রয়োজনমতো এলাচি দেওয়া হয়। এতে প্রায় ৮ কেজি খাজা হয়।

এই খাজা উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় তাঁদের কারখানা আছে।

ব্যবসায় এখানে একক কোনো মালিক নেই। এখানে মালিক–শ্রমিক সবাই কাজ করেন। লাভ-লোকসান সবাই ভাগ করে নেন। তবে সরকারি বা বেসরকারিভাবে এই খাতে অর্থ সহায়তা পেলে ব্যবসার প্রসার ঘটানো সম্ভব বলে তাঁরা জানান।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক সরওয়ার মুর্শেদ বলেন, ঐহিত্যবাহী তিলের খাজা কুষ্টিয়ার লোকখাবার। অন্য জেলাতেও এটা আছে। বহু পুরোনো মজাদার সুস্বাধু তিলের খাজা ছোট–বড় বৃদ্ধ সবার মন কাড়ে।