রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটকাগজের চিহ্নমেলার উদ্বোধন

জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় চিহ্নমেলা। পরে ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবনের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চমবারের মতো শুরু হয়েছে ছোটকাগজের চিহ্নমেলা। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ মেলার উদ্বোধন করেন লিটলম্যাগ ব্যক্তিত্ব সন্দীপ দত্ত। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।

জাতীয় সংগীত ও পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী সম্মিলনের উদ্বোধন করা হয়। এরপর ক্যাম্পাসে লেখক-পাঠক-সম্পাদকেরা শোভাযাত্রা বের করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার, অর্থনীতিবিদ সনৎ কুমার সাহা, কবি জুলফিকার মতিন, সহ–উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম, বাংলা একাডেমির উপপরিচালক আমিনুর রহমান সুলতান, ‘চিহ্ন’ সম্পাদক শহীদ ইকবাল প্রমুখ।

কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, ‘“চিহ্ন” নামটা আমার ভালো লেগেছে। এটি শুনেই আমার মনে পড়েছে রবীন্দ্রনাথের “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে”র কথা। রবীন্দ্রনাথ এখানে চিহ্নকে নেতিবাচক বলেছেন। কিন্তু চিহ্নমেলার চিহ্ন এখানে ইতিবাচক। আমরা আমাদের ভালোবাসার, সংগ্রামের, প্রতিবাদের চিহ্ন রেখে যেতে চাই। এই ইতিবাচক ধারণা নিয়ে বলতে চাই, যখন পড়বে মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে। “চিহ্ন” এই কাজ করে যাচ্ছে।’

উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘অধ্যাপক শহীদ ইকবাল ও ‘চিহ্ন’ টিম তাদের একক প্রচেষ্টায় এত বড় একটা আয়োজন করেছে। আমরা প্রাকৃতিক ভূগোলকে অতিক্রম করে ভাষার ভূগোলে এক হয়েছি। ‘চিহ্ন’ এই মিলনমেলা করতে সক্ষম হয়েছে।’ তিনি ভারতসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে থেকে আসা লেখক-পাঠক-সম্পাদকদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখারও আহ্বান জানান।

উদ্বোধনের পর চিহ্নমেলায় লিটলম্যাগের স্টলে ভিড় করেন পাঠকেরা। আজ সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবনের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

মেলার উদ্বোধন শেষে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মঞ্চে শুরু হয় আমিনুর রহমান সুলতানের সঞ্চালনায় ‘প্রয়াত প্রিয়-জন’ শিরোনামে স্মৃতিচারণামূলক আড্ডা। এতে প্রয়াত শঙ্খ ঘোষ, সৈয়দ শামসুল হক, দেবেশ রায়, আনিসুজ্জামান ও হাসান আজিজুল হককে নিয়ে কথা বলেন নির্মলেন্দু গুণ, সনৎ কুমার সাহা, জুলফিকার মতিন, রুহুল আমিন প্রামাণিক, ইমানুল হক ও মোহাম্মদ আজম।

আয়োজক সূত্রে জানা জানা গেছে, দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে দেশ–বিদেশের দুই শতাধিক ছোটকাগজসহ পাঁচ শতাধিক লেখক-পাঠক-সম্পাদকের সমাবেশ ঘটবে। দুপুরে সৈকত হাবিবের সঞ্চালনায় হয় ‘গল্প ও কবিতাপাঠ’। পরে আড্ডা হয় ‘ভাষার অনুবাদ, অনুবাদের ভাষা’ নিয়ে। সন্ধ্যায় হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মেলার শেষ দিন মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ‘লিটলম্যাগে লেখালেখি: দ্বৈরথ ও দ্বন্দ্ব’ নিয়ে আড্ডা হবে। এ ছাড়া মেলা উপলক্ষে প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকার মোড়ক উন্মোচন করা হবে। বিকেলে রাহেল রাজীবের সঞ্চালনায় ‘গদ্য আখ্যান ও বাংলার গ্রামীণ জীবন’ নামক প্রবন্ধ পাঠ করবেন মোস্তাক আহমেদ। বিকেলে অংশগ্রহণকারী পত্রিকার সম্পাদকদের চিহ্ন স্মারক দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন ‘চিহ্ন’ সম্পাদক শহীদ ইকবাল।

সমাপনী সন্ধ্যায় ‘চিহ্ন সাহিত্য পুরস্কার’, ‘চিহ্ন সারস্বত সম্মাননা’ ও ‘চিহ্ন লিটলম্যাগ সম্মাননা’ প্রদান করা হবে। এবার ‘চিহ্ন সাহিত্য পুরস্কার’ পাচ্ছেন কথাসাহিত্যিক হামিদ কায়সার, ‘চিহ্ন সারস্বত সম্মাননা’য় ভূষিত হচ্ছেন প্রবীণ সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ জুলফিকার মতিন, ‘চিহ্ন লিটলম্যাগ’ সম্মাননা পাচ্ছে চট্টগ্রামের ছোটকাগজ ‘তৃতীয় চোখ’ ও ভারতের ছোটকাগজ ‘নৌকো’।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শহীদ ইকবালের সম্পাদনায় ‘চিহ্ন’ প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে নিয়মিত বের হচ্ছে। এর আগে ২০১১, ২০১৩, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে চিহ্নমেলার আয়োজন করা হয়। প্রতিবার মার্চে এই মেলা হলেও এবার করোনার কারণে বিলম্বে, অক্টোবরে হচ্ছে।