আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত না মেনে ‘দলীয় প্রার্থী’ ঘোষণা করলেন প্রতিমন্ত্রী মহিববুর

কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দুজনের নাম ঘোষণা করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের ইয়ুথ ইন চত্বরে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায়ছবি: সংগৃহীত

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের জন্য আওয়ামী লীগের ‘দলীয় প্রার্থী’ হিসেবে দুজনের নাম ঘোষণা করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের ইয়ুথ ইন চত্বরে কুয়াকাটা পৌরসভা ও পৌর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই ঘোষণা দেন। এ সময় উপস্থিত সবার সামনে তিনি ওই দুজনকে পরিচয় করিয়ে দেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারব্যবস্থার নির্বাচনগুলোয় দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ কাউকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে না। যাঁর যাঁর মতো করে স্বতন্ত্রভাবে দলের নেতারা নির্বাচন করতে পারবেন। যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতারা ভোট করতে পারবেন।

গতকালের অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেন, ‘আগামী উপজেলা নির্বাচনে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা দল থেকে, আওয়ামী লীগ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আওয়ামী লীগের বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক ত্যাগী নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব তালুকদারকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. ইউসুফ আলীকে দল থেকে মনোনীত করেছি।’

তিনি বলেন, নির্বাচনে অনেক প্রার্থী আসবেন, কিন্তু দুর্দিনে যাঁরা দলের জন্য শ্রম দিয়েছেন ও দলকে আগলে রেখেছেন—এমন দুই নেতাকে দল থেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন তিনি।

কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-সংগঠনের একাধিক নেতা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। প্রার্থীদের অনেকে তৃণমূল ভোটারসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে গণসংযোগ করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এমন অবস্থায় প্রতিমন্ত্রীর এ ধরনের ঘোষণাকে ‘দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন অনেকে।

উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিতে স্থানীয়ভাবে গণসংযোগ করছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামিম আল সাইফুল। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী হয়ে তিনি এভাবে নিজের খেয়াল-খুশি মতো কাউকে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন না। কারণ, ইতিমধ্যে দলের সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনসহ সব স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীক ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে। কেউই দল মনোনীত প্রার্থী হবেন না। এমনকি আমাদের দল থেকে যাঁরা নির্বাচন করবেন, তাঁরা দলীয় পদ ব্যবহার করতে পারবেন না।’

দল থেকে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্য পরবর্তীতে প্রতিমন্ত্রী হয়ে প্রকাশ্য সভায় প্রার্থী ঘোষণা করে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করেছেন বলে মনে করেন যুবলীগ নেতা শামিম। এ বিষয়ে তাঁরা দলের সভানেত্রী, সাধারণ সম্পাদকসহ উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের অবহিত করেছেন বলে জানান।

উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের আগ্রহ দেখিয়েছেন টিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আখতারুজ্জামান। প্রতিমন্ত্রীর প্রার্থী ঘোষণায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গতবার সামান্য ভোটে হেরে গেছি। এবারও চেয়ারম্যান পদে আমি নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছি। হঠাৎ প্রতিমন্ত্রী একজনকে প্রার্থী ঘোষণা দিলেন, এটা হতে পারে না। তিনি দলীয় নিয়ম ভঙ্গ করে এ কাজটি করেছেন। আমরা এ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানাব।’

এভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা দেওয়ার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দল থেকে তাঁরা প্রার্থী, তাঁরা তাঁরা দাঁড়াতে চান, সেটা বলেছি। দলীয় প্রার্থী তো দেওয়ার সুযোগ নেই।’