সম্পত্তির ভাগ পেতে বাবার লাশ ৩১ ঘণ্টা আটকে রাখলেন পাঁচ মেয়ে

খুলনা জেলার মানচিত্র

সম্পত্তির ভাগ পেতে বাবার লাশ আটকে রেখেছিলেন পাঁচ মেয়ে। সম্পত্তির ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা বাবার লাশ দাফন করতে দিতে চাচ্ছিলেন না। এ কারণে লাশ বাড়ির উঠানে পড়ে ছিল। পরে প্রশাসনের সহায়তায় ৩১ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে লাশটি দাফন করা হয়েছে। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের ঘোষাল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত ব্যক্তির নাম সাকাত গাজী। একমাত্র ছেলে মামুন গাজী সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মেয়েরা। মামুন গাজী পরিবার নিয়ে পলাতক।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, সাকাত গাজী কিডনির রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কয়েক দিন আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে মামুন গাজী তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে থাকাকালে মামুন বাবার সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নেন। গত বুধবার ভোররাত চারটার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান সাকাত গাজী। তাঁর মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে পালিয়ে যান মামুন। সকাল ৮টার দিকে লাশ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সচালক বাড়িতে আসেন। পরে স্থানীয় লোকজন মরদেহ দাফন করার ব্যবস্থা করলে মামুনের পাঁচ বোন দাফনে বাধা দেন। এর পর থেকে থানার পুলিশ ওই বাড়িতে না যাওয়া পর্যন্ত লাশ ওই বাড়ির উঠানেই পড়ে ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাকাত গাজীর এক মেয়ে লাবনী আক্তার জানান, তাঁর ভাই বাবার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তাঁদের না জানিয়ে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছেন। এ কারণে সম্পত্তির ন্যায্য ভাগের ফয়সালা পেতে তাঁরা লাশ দাফনে বাধা দিয়েছেন।

স্থানীয় ঘোষাল জামে মসজিদের ইমাম বেলাল হোসেন জানান, সাকাত গাজীর মৃত্যুর সংবাদ শুনে বুধবার জোহর নামাজের পর জানাজা নামাজের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু মৃত ব্যক্তির পাঁচ মেয়ে এসে জানাজা ও মরদেহ দাফনে বাধা দেওয়ায় এলাকাবাসী সিদ্ধান্ত নেন যে সাকাত গাজীর জানাজা তাঁরা পড়বেন না।

পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাকাত গাজীর লাশ মেয়েরা দাফন করতে দিচ্ছেন না শুনে তিনি ওই বাড়িতে যান। পরে মেয়েদের আশ্বস্ত করে দুপুরের দিকে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন। হাসপাতালে মারা যাওয়ার সময় মামুন যে সাকাত গাজীর সম্পত্তি লিখে নিয়েছেন, তা স্পষ্ট। সাকাত গাজীর নামে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার সম্পত্তি ছিল বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

অসুস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে জমি লিখে নেওয়ার আইনগত ভিত্তি আছে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী আইনজীবী মো. মোমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে টিপসই নিয়ে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। নিয়মানুযায়ী সম্পত্তি দানকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই রেজিস্ট্রি অফিসে হাজির হয়ে রেজিস্ট্রারের সামনে জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে। ওই ব্যক্তি যদি চলাচলে অক্ষম থাকেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট কমিশনার তাঁর কাছে গিয়ে টিপসই নিয়ে আসবেন। কিন্তু এই ঘটনার ক্ষেত্রে এর কোনোটিই করা হয়নি। তাই ওই জমি শুধু একজনের নামে চলে গেছে—এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। নিয়মানুযায়ী সব বোন জমির ভাগ পাবেন।