হালখাতার মাধ্যমে বকেয়া ভূমিকর আদায় করল নাগেশ্বরী উপজেলা প্রশাসন
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় বকেয়া ভূমিকর আদায়ে হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে পয়লা বৈশাখ ও বর্ষবরণ উপলক্ষে উপজেলাবাসীর জন্য ভিন্নধর্মী এ হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
নাগেশ্বরী উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, লাল নীল কাগজ, ব্যানার ফেস্টুনে সাজানো উপজেলা ভূমি কার্যালয় চত্বর। হালখাতা অনুষ্ঠান ঘিরে ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়িসহ রাখা হয়েছে গ্রামীণ নানা অনুষঙ্গ। চত্বরজুড়ে যেন উৎসবের আমেজ। লক্ষ্য, ভূমিকর বা খাজনা আদায়। ভিন্ন ধরনের এই হালখাতা অনুষ্ঠানে ভূমিকর প্রদান করতে আসা নাগরিকদের মোয়া, মুড়ি ও মিষ্টান্ন দিয়ে আতিথেয়তা করা হচ্ছে।
উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নাগেশ্বরী উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রতিবছর ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা ভূমিকর আদায় হয়। গত বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা বকেয়া ছিল। বকেয়া কর আদায়ে উপজেলা ভূমি কার্যালয় উপজেলার নাগরিকদের জন্য দিনব্যাপী হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন। এতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দারা দালালের বিড়ম্বনা ছাড়াই খাজনা প্রদান করেন।
নাগেশ্বরী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মধুর হাইল্যা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব আলী বলেন, ‘আগে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে খাজনা পরিশোধ করতে এলে দালালের কারণে অনেক টাকা চলে যেত। আজ উপজেলা প্রশাসনের হালখাতা অনুষ্ঠানে এসে দালাল ছাড়াই সরাসরি খাজনা দিলাম। ২ একর ৮৭ শতাংশ জমির জন্য তিন বছরের খাজনা ৬ হাজার ২২১ টাকা পরিশোধ করলাম। খাজনা পরিশোধ শেষে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন ডেকে নিয়ে গিয়ে অফিসে মুড়ি, মোয়া ও মিষ্টি খাওয়ালেন। খুব ভালো লাগল। আমরা প্রতিবছর এই হালখাতা অনুষ্ঠান চাই।’
সন্তোষপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ধনিগাগলা এলাকার বাসিন্দা আনোয়াত হোসেন তালুকদার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আমি আমার জীবদ্দশায় কখনো দেখিনি জমির খাজনা দিতে এলে জনগণকে মিষ্টি খাওয়ায়। জনগণকে দালালের হয়রানি ছাড়া জমির খাজনা পরিশোধ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের এই হালখাতা প্রতিবছর হলে জমির খাজনা বকেয়া পড়বে না।’
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, সম্রাট আকবরের সময় থেকে ভূমি কার্যালয়ে বাঙালি ঐতিহ্য হালখাতা অনুষ্ঠান চালু ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা এ দেশে আসার পর ভূমি কার্যালয়ের হালখাতা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘নববর্ষ উপলক্ষে বাঙালির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আমরা বাংলাদেশে প্রথম ভূমি অফিসে এই হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। আজ দিনব্যাপী এই হালখাতা অনুষ্ঠান হবে। আমরা প্রত্যাশা করছি, আমাদের বকেয়া ভূমিকরের ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা আদায় হবে।’
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দেখতাম, বড় বড় ব্যবসায়ী হালখাতা করে তাঁদের বকেয়া আদায় করতেন। বাংলাদেশে এবারেই প্রথম উপজেলা ভূমি অফিসে হালখাতা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনেছে। এই হালখাতা অনুষ্ঠানে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। উপজেলা ভূমি অফিস তাদের বকেয়া খাজনা সব আদায় করতে পারবে বলে আশা করছি।’