হত্যা মামলায় এনসিপি নেতা কারাগারে, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ, মশালমিছিল

এনসিপি নেতা রাইয়ান কাশেমকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে শহরে মশাল মিছিল বের করা হয়। আজ রাতে তোলাপ্রথম আলো

কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের একটি মৎস্যখামারে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাসহ তিনজনকে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যা থেকে সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে এই বিক্ষোভ হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কারাগারে যাওয়া এনসিপি নেতার নাম রাইয়ান কাশেম। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজারের সমন্বয়ক ছিলেন। তাঁর বাবা জাহাঙ্গীর কাশেম আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। অন্য দুজন হলেন জাহাঙ্গীর কাশেমের মালিকানাধীন খুরুশকুলের আল্লাহওয়ালা হ্যাচারির নৈশপ্রহরী মোহাম্মদ হোসাইন ও মোহাম্মদ মিজান।

পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার মধ্যরাতে খুরুশকুল পুরোনো সেতুসংলগ্ন আল্লাহওয়ালা হ্যাচারিতে আলী আবকর নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি খুরুশকুল ইউনিয়নের কুলিয়াপাড়ার বাসিন্দা আলী আহমদের ছেলে।

পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সোমবার রাতে রাইয়ান কাশেম, মোহাম্মদ হোসাইন ও মোহাম্মদ মিজানকে আটক করে। আজ দুপুরে তিনজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আখতার জাবেদের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর আজ রাত সোয়া ১০টায় আলী আকবরের স্ত্রী বাদী হয়ে রাইয়ানসহ কারাগারে পাঠানো তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ বলছে, ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

এনসিপি নেতা রাইয়ান কাশেম
ছবি: সংগৃহীত

রাইয়ান কাশেমকে কারাগারে পাঠানোর খবর প্রচারিত হলে আজ সন্ধ্যায় সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে কয়েক শ তরুণ শহরে মশালমিছিল বের করেন। তাঁরা শহরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ফটকে জড়ো হয়ে মশাল জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান প্রথম আলোকে বলেন, খুরুশকুলের একটি হ্যাচারিতে আলী আকবরকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়। আটক তিনজনের মধ্যে রাইয়ান কাশেমের মুক্তির দাবিতে শহরে মশালমিছিল, টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ৯টার পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

রাইয়ান কাশেমের মুক্তির দাবিতে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ। আজ রাতে তোলা
প্রথম আলো

ওসি ইলিয়াস খান বলেন, আজ রাত সোয়া ১০টার দিকে নিহত আলী আকবরের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় হত্যা দায়ের করেন। ওই মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ রয়েছে। কারাগারে পাঠানো তিনজনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

নিহতের পরিবারের দাবি, মাছ চুরির অপবাদ দিয়ে রোববার গভীর রাতে আলী আকবরকে ঘর থেকে তুলে এনে আল্লাহওয়ালা হ্যাচারিতে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মূলত জমির বিরোধের জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

কারাগারে পাঠানোর আগে এনসিপি নেতা রাইয়ান কাশেম সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের আল্লাহওয়ালা হ্যাচারিতে মাছ চুরির করার সময় আলী আকবরকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন নিরাপত্তা প্রহরীরা। পরে আলী আকবর আঘাত করলে আত্মরক্ষার্থে নিরাপত্তা প্রহরীরাও পাল্টা আঘাত করেন। তাতে আলী আকবরের মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনি জড়িত নন।