ত্রিশালে ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর, সংসদ সদস্যের ছেলেসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ

ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল আহমেদ। গতকাল সোমবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের ত্রিশালে নির্বাচনী বিরোধের জেরে ফয়সাল আহমেদ নামের ছাত্রলীগের এক নেতাকে সংসদ সদস্যের বাড়িতে তুলে নিয়ে মারধরের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ভুক্তভোগী ছাত্রলীগ নেতার বাবা আবদুর রহিম বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় সংসদ সদস্যের ছেলেসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে একটি এজাহার দেন।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সংসদ সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামানের ছেলে সাদমান সামিনের নির্দেশে কয়েকজন মিলে ফয়সালকে সংসদ সদস্যের বাড়িতে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়। অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ফয়সাল আহমেদ ত্রিশালের কবি নজরুল কলেজের মানবিক শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র পদের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্যের স্ত্রীর হেরে যাওয়া নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে গত রোববার উপজেলা সদরের একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার থেকে তাঁকে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সংসদ সদস্য এ বি এম আনিসুজ্জামানের বাড়িতে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়। ওই দিন রাতে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

লিখিত এজাহারের বিষয়ে জানতে আজ ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেনকে ফোন করলেও তিনি ধরেননি। তবে গতকাল সোমবার তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ফয়সালকে মারধরের পর সংসদ সদস্যের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে ছাত্রলীগের নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফয়সালকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী ফয়সাল আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাঁকে তুলে নিয়ে মারধর করা হলেও মূলত সংসদ নির্বাচনের বিরোধের জেরে তাঁকে মারধর করা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনে তিনি ময়মনসিংহ-৭ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রুহুল আমিন মাদানীর পক্ষে ছিলেন এবং তাঁর পক্ষে ফেসবুকে প্রচারণা চালাতেন। সংসদ নির্বাচনে রুহুল আমিন মাদানীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন পৌর মেয়রের পদ ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া এ বি এম আনিছুজ্জামান। এ জন্য আনিছুজ্জামান তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। পরে নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হন। এরপর মেয়র পদের উপনির্বাচনে তফসিল হয়। মেয়র পদে আনিছুজ্জামানের স্ত্রী শামীমা আক্তার নির্বাচন করেন। মেয়র নির্বাচনে সংসদ সদস্যের স্ত্রী হেরে যাওয়ার পর ফেসবুক পোস্টের অজুহাতে তাঁকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়।

ফয়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর সংসদ সদস্যের তিনতলা বাড়ির ছাদে আটকে রেখে কয়েক দফা মারধর করা হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে ছাত্রলীগ নেতাদের হস্তক্ষেপে পুলিশ ছেড়ে দেয়।

অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামান ও তাঁর ছেলে সাদমান সামিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া না মেলায় এ ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মারধরের কারণে এখনো শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা ফয়সালের। রোববার রাতে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও হাসপাতালের শৌচাগার ব্যবহার করতে না পারায় আজ তিনি বাড়িতে চলে গেছেন। ফয়সালের মা জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমার ছেলেকে কেন এভাবে মারল? একজন এমপি হলেই কী এভাবে ধরে নিয়ে যেতে পারেন। দেশে কী কোনো আইনকানুন নেই।’