জ্বালাও-পোড়াও কোনোভাবেই কাম্য নয়: কায়সার কামাল
বিএনপি কখনোই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি পছন্দ ও বিশ্বাস করে না, এ দাবিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ছয় মাস পর এসে রাজধানীসহ সারা দেশে যে জ্বালাও–পোড়াও ও ভাঙচুরের ধ্বংসাত্মক ঘটনাগুলো ঘটছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিএনপি কোনোভাবেই এগুলো সমর্থন করে না। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত কঠোরভাবে এসব দমন করা, তা না হলে দেশ এক ভয়াবহ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির দিকে চলে যাবে। পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও দীর্ঘায়িত হবে। নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া একটি দেশ কখনো সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না।
আজ শনিবার দুপুরে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার গুজিরকোনা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিনা মূল্যে চক্ষুশিবিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন কায়সার কামাল। তাঁর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ চক্ষুশিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। এতে সহযোগিতা করেছে ময়মনসিংহের ডাক্তার কে জামান বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল জানান, তাঁর দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা গতকাল শুক্রবার এক সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আগামী সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দেখা করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুরের ঘটনাসহ চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, এ দেশে আইনের শাসন কায়েম হোক এবং দ্রুত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক। কারণ, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে এ রকম বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’
কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হতে দলের নেতা-কর্মীদের কায়সার কামাল বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশ আছে এ বিষয়ে। কেউ যদি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি করেন, তবে দলীয়ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি আবারও স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি কখনোই এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বিশ্বাস করে না। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা হলেও আমার নিজ জেলা নেত্রকোনায় তা হয়নি। এ জন্য প্রত্যেক নাগরিককে ধন্যবাদ জানাই।’
চক্ষুশিবিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাক্তার কে জামান বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের ট্রাস্টি বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক ও ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন, ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাহী সদস্য শরিফুজ্জামান, চক্ষু চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম, দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা এম এ জিন্নাহ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বজলুর রহমান পাঠান, দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহিরুল আলম ভুঁইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন, বাকলজোড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সাত্তার, সদস্যসচিব আনোয়ার খলিফা প্রমুখ।
দিনব্যাপী চলা এই চক্ষুশিবিরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা অন্তত তিন হাজার রোগীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৭৪৫ রোগীকে চোখের ছানি ও অন্যান্য অপারেশনের জন্য নির্বাচিত করা হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে পর্যায়ক্রমে রোগীদের বিনা মূল্যে এই চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে।
দুর্গাপুরের বিরিশিরি এলাকার বাসিন্দা রমিজ মিয়া (৭০) প্রায় তিন বছর ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছেন। টাকার অভাবে হাসপাতালে গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা নিতে পারছিলেন না। চক্ষুশিবিরে তিনি ডাক্তার দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ডাক্তার বলছেন, আমার চোখে ছানি পড়েছে, অপারেশন করতে হবে। সোমবার তাদের খরচে ময়মনসিংহে ডাক্তার কে জামান হাসপাতালে নিয়ে অপারেশন করানো হবে।’
চক্ষুশিবির উদ্বোধনের আগে কায়সার কামাল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ দুর্গাপুরের রাজীব মিয়াকে একটি হুইলচেয়ার ও তাঁর পরিবারের জন্য একটি ইজিবাইক উপহার দেন।