রাজবাড়ীতে ‘গফুর চাচার চপ’ খেতে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের ভিড়
রাস্তা ঘেঁষে ছোট্ট একটি টিনের ছাপরা। সামনে অনেক মানুষের ভিড়। ভিড় ঠেলে কাছে যেতেই দেখা যায় বয়স্ক এক ব্যক্তি মুখরোচক চপ তৈরি করছেন। কড়াই থেকে গরম তেলে ভাজা চপের ঘ্রাণ উঠে আসছে। তাঁর কাজে সহযোগিতা করছেন এক যুবক। এই চপ নিতেই এত মানুষের ভিড়।
সম্প্রতি এক বিকেলে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর বাজারের আবদুল গফুর বিশ্বাসের (৬৪) চপের দোকানে এমন ভিড় দেখা যায়। ২০ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে তিনি চপ বিক্রি করছেন। ‘গফুর চাচার চপ’–এর জন্য প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের ভিড় লেগে থাকে। তাঁর চপের সুনাম জেলাব্যাপী।
আবদুল গফুর বিশ্বাস বলেন, সদর উপজেলার খানখানাপুর ভান্ডারিয়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। স্ত্রী, দুই ছেলে, তাঁদের স্ত্রী ও দুই নাতিসহ আট সদস্যের সংসার। বড় ছেলে মিন্টু বিশ্বাস ঢাকায় পোশাকের দোকানে কাজ করেন। ছোট ছেলে তুহিন বিশ্বাস ওমানপ্রবাসী। চপের ব্যবসা করেই সংসারের খরচ জোগান।
খানখানাপুর বাজারে আগে রাস্তার ধারে চপ বিক্রি করতেন আবদুল গফুর। আট বছর ধরে একটি ছোট্ট ছাপরা মাসিক তিন হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছেন। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। সহযোগিতার জন্য লুৎফর শেখ (৪২) নামের কর্মচারীকে প্রতিদিন ৩৫০ টাকা বেতন দেন। উপকরণ কেনায় গড়ে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। একটি চপ ১০ টাকায় বিক্রি করেন। পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার, কোনো দিন ছয় হাজার টাকা বেচাকেনা হয়। খরচ বাদে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা থাকে।
ফরিদপুরের শিবরামপুর বাড়ি থেকে স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে মোটরসাইকেলে রাজবাড়ী শহরে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন জাফর শেখ। পথে আবদুল গফুরের দোকানে চপ কেনার অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘গফুর চাচার চপের অনেক সুনাম। সুযোগ পেলে মাঝেমধ্যে এসে খেয়ে যাই। শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি বলে ফলফলাদির সঙ্গে চপ নিয়ে যাচ্ছি। এ জন্য ২০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি।’
গোয়ালন্দের বিদ্যালয়শিক্ষক হেলাল মাহমুদ দীর্ঘক্ষণ লাইনে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘১০ বছর ধরে গফুর চাচার চপ খাই। মুরগির মাংসসহ অন্যান্য উপকরণ নিয়ে এমনভাবে তৈরি করেন, যার স্বাদই আলাদা। কোনো ভেজাল জিনিস দেন না। শহর থেকে বাড়ি ফেরার পথে মাঝেমধ্যে পরিবারের জন্য গরম চপ নিয়ে যাই।’