কাউন্টারে টিকিট দিল, টাকাও নিল; কিন্তু পরীক্ষা হচ্ছে না

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দশম গ্রেডে উন্নীতকরণের দাবিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি চলছে। এ সময় সেবা নিতে ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালেছবি: সৌরভ দাশ

ক্যানসারে আক্রান্ত মাকে কেমোথেরাপি দিতে হবে। এর আগে করতে হবে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এ কারণে নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. ইসমাইল। কিন্তু সকাল থেকে টানা তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মায়ের পরীক্ষা করাতে পারেননি তিনি। হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতির কারণে দূর থেকে এসেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাঁকে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগের সামনে কথা হয় মো. ইসমাইলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘২০ দিন আগে মায়ের খাদ্যনালিতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এবার কেমোথেরাপি দেওয়ার জন্য কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। এ জন্য হাসপাতালের কাউন্টারে টিকিট দিল, টাকাও নিল; কিন্তু পরীক্ষা হচ্ছে না। সকাল থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছি।’  

ইসমাইলের মতো এমন অসংখ্য রোগীর স্বজন ও রোগীকে দেখা গেল বহির্বিভাগের প্যাথোলজি ল্যাবের সামনে। তাঁদের অধিকাংশই সকাল ৮টা বা ৯টা থেকে অপেক্ষা করছেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে আজ ৪ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করছে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ। এ কারণে সেবা নিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।

সেবা নিতে শিশু কোলে কয়েক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন এই মা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগে
ছবি: সৌরভ দাশ

প্যাথোলজি ল্যাবের সামনে কথা হয় মোহাম্মদ ইব্রাহীম, জাকির হোসেন ও সাবিনা খাতুনের সঙ্গে। মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও জাকির হোসেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী। রক্ত পরীক্ষা করানোর জন্য দাঁড়িয়েছিলেন সকাল ৯টা থেকে। কিন্তু টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা না থাকায় তাঁদের রক্তের নমুনা নেওয়া হয়নি।

সাবিনা খাতুনের তিন বছরের শিশুর তীব্র জ্বর। তিনি ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, পরীক্ষা বন্ধ থাকলে টিকিট দেওয়ার আগে বলে দিলে হয়। টাকা জমা নিয়ে নিল অথচ এখনো পরীক্ষা করানো হচ্ছে না।  

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা হাসপাতালগুলোয় রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা, ইমেজিং, যন্ত্র পরিচালনা, ফিজিওথেরাপি, ডেন্টাল টেকনোলজি, অপারেশন থিয়েটার টেকনোলজি, ব্লাড ব্যাংকসহ নানা ক্ষেত্রে কাজ করেন। কর্মসূচির চার ঘণ্টা এসব সেবা বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা। দুপুর সাড়ে ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কর্মসূচি চলছিল।

এর আগে গত রোববার দুই ঘণ্টা এবং গতকাল বুধবার চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। এ কারণে কয়েক হাজার রোগীর সেবা বিলম্ব হয়েছে।

কাউন্টার থেকে টাকা নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষার টিকিট দিলেও পরীক্ষা হচ্ছে না। আজ বৃহস্পতিবার সকালে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগে
ছবি: সৌরভ দাশ

আজ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মসূচি শিথিল ছিল। তবে অধিকাংশ রোগী ছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালমুখী। কারণ, এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ কম।

এদিকে সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে কর্মবিরতির সময় মানববন্ধন করেছেন টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। তাঁদের অভিযোগ, করোনা, ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ও ওষুধ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও তাঁদের গ্রেড উন্নীতকরণের ফাইল দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দপ্তরে ঝুলে আছে। ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, নার্স ও কৃষিবিদদের দশম গ্রেড দেওয়া হলেও সমশিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

কর্মবিরতির কারণে ফাঁকা পড়ে আছে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের টেবিল। আজ বৃহস্পতিবার সকালে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগে
ছবি: সৌরভ দাশ

সংগঠনের চট্টগ্রাম সমন্বয়ক মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ, সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বঙ্গভবনের মেডিকেল সেন্টার—সবখানে রোগ নির্ণয় ও ওষুধ ব্যবস্থাপনায় টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা সরাসরি দায়িত্ব পালন করছেন। তবু কয়েক মাস ধরে আবেদন জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কর্মবিরতির বিষয়ে আগেই তাঁরা স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাঁদের দাবিগুলো বিভাগীয় পরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে।