ঠাকুরগাঁওয়ের পাঁচ উপজেলা চেয়ারম্যানই নৌকার ‘মাঝি’ হতে চান

আওয়ামী লীগ

ঠাকুরগাঁও জেলায় পাঁচটি উপজেলা। পাঁচটি উপজেলা পড়েছে তিনটি সংসদীয় আসনে। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি উপজেলা পরিষদের পাঁচজন চেয়ারম্যানই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন। সব মিলে তিনটি সংসদীয় আসনে মনোনয়ন চেয়ে ৩৩ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার ছিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়ার শেষ দিন।

মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের ভাষ্য, তাঁরা আরও বড় পরিসরে জনসেবা করতে চান। এ জন্য সংসদ সদস্য হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা তাঁদের জাতীয় সংসদে দেখতে চাইছেন। আবার কেউ বলেছেন, রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে তাঁরা দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়ে জমা দিয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে ঠাকুরগাঁও-১ আসন গঠিত। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। এবারও তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছেন। পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অরুণাংশু দত্ত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন। অরুণাংশু দত্ত উপজেলা চেয়ারম্যানের পাশাপাশি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে রয়েছেন। এর আগে তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন।

অরুণাংশু দত্ত বলেন, ‘সব মানুষেরই উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকে। প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের চাওয়া থাকে সংসদ সদস্য হওয়ার। তা ছাড়া একজন সংসদ সদস্যেরই এলাকার উন্নয়ন করার সুযোগ থাকে। উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন আমি যেটুকু উন্নয়ন করেছি, তা সীমিত। সংসদ সদস্য হলে আরও অনেক মানুষের সেবা করার সুযোগ পাওয়া যাবে। এই ভাবনা থেকেই এবারের নির্বাচনে সংসদ সদস্যের মনোনয়নপত্র কিনেছি। এ সময়ে আমাদের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো সর্বোচ্চসংখ্যক ভোটারকে কেন্দ্রে আনা। আমি মনোনয়ন পেলে সবার চেয়ে অনেক বেশি ভোটারকে কেন্দ্র আনতে পারব।’

বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে ঠাকুরগাঁও-২ আসন গঠিত। এ আসনে ১৯৮৬ সাল থেকে টানা সাতবারের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম। তিনি এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে ফরম জমা দিয়েছেন। তিনি ছাড়াও এ আসনের দুই উপজেলা পরিষদের বর্তমান দুই চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হতে চান। তাঁরা হলেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম এবং হরিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল হাসান। আলী আসলাম সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের ছোট ভাই ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

আলী আসলাম বলেন, ‘আমি তৃণমূল মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে আছি। সুখ-দুঃখে তাদের পাশে আছি। তারাই ভালোবেসে আমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করেছেন। এবারের সংসদ নির্বাচনে এলাকার তৃণমূল পর্যায়ের মানুষেরা আমাকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অনুরোধে করেছেন। তাদের অনুরোধেই আমি দলের মনোনয়ন চাইছি। তা ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের আসতে আহ্বান করেছেন। নেত্রীর এই আহ্বানই আমাকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হতে উৎসাহ জুগিয়েছে।’

হরিপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসানের ভাষ্য, স্বাধীনতার পর থেকে সংসদ সদস্য পায়নি হরিপুরবাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছেন, সেই তুলনায় হরিপুরে উন্নয়ন হয়নি। সেই উন্নয়নের জন্যই হরিপুরবাসী আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য তাঁকে চেষ্টা করতে বলেছেন। তাঁদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে মূলত তিনি মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলার আংশিক) আসনে গত চারটি জাতীয় নির্বাচনে কখনো মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টি, আবার কখনো ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মহাজোটের হিসাব-নিকাশে পড়ে ২০০১ সাল থেকে সেখানে দলের কোনো প্রার্থী পাননি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভের শেষ নেই। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ। তবে এবার আর শরিকদের ছাড় দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। এবারের নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন ১০ নেতা। তাঁদের মধ্যে পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুল ইসলাম ও রানীশংকৈল উপজেলার চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজমও রয়েছেন।

শাহরিয়ার আজম বললেন, ‘এই এলাকা আওয়ামী লীগ-অধ্যুষিত হলেও দীর্ঘদিন আমরা মনোনয়নবঞ্চিত। এই কারণে এখানে তেমন উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগেনি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকায় এলাকার উন্নয়নে চেষ্টা করে যাচ্ছি। সংসদ সদস্য হতে পারলে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারব।’

আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এলাকার মানুষ আমাকে বিজয়ী করেছেন। এই এলাকার মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্কে রয়েছে। তাই এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। আর মনোনয়ন পেলে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীকে আসনটি উপহার দেওয়া সম্ভব।’