সরকার এবার দিনের বেলা ভোট ডাকাতির ফন্দি আঁটছে: জোনায়েদ সাকি

‘রাজনৈতিক সংকট ও গণতান্ত্রিক শক্তি সমূহের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। রোববার উমেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদী সরকার এবার দিনে ভোট ডাকাতির ফন্দি আঁটছে। সরকার ও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন না ঘটালে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ জন্য সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

আজ রোববার খুলনার উমেশ চন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে ‘রাজনৈতিক সংকট ও গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ইসির ক্ষমতা কমানো হয়েছে। এখন তারা (ইসি) কী করতে পারবে? যে কেন্দ্রটিতে তারা ভোট জালিয়াতি দেখছে, সেই কেন্দ্রটিকে তারা বাতিল করতে পারবে, পুরো নির্বাচন বাতিল করতে পারবে না। ধরুন, একেকটি আসনে ১০০ থেকে ১৪০টি কেন্দ্র। এখন ইসি ১৪০টি কেন্দ্রের বুথ পরীক্ষা করতে পারবে? খেয়াল করে দেখেন, ১৪০ গুণ ৩০০ এটা কি সম্ভব? যে জনবল তাদের আছে তা দিয়ে সম্ভব নয়।’

সাকি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনেরা যেটা চিন্তা করছে সেটা হলো, ১৪০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫-১০টি কেন্দ্রে যদি জালিয়াতি ধরা পড়ে যায়, তাহলে ওই কেন্দ্রগুলো বাতিল হবে, বাকি কেন্দ্রগুলোর ভোট ডাকাতি জায়েজ হয়ে গেল। এর মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করে তারা জয়লাভ করবে। এই যে বুদ্ধি তারা বের করল, নির্বাচন কমিশনের লোকেরাই বলুন আর সরকারের লোকেরাই বলুন বা তাদের পরামর্শদাতারাই বলুন, তাদের জন্য বুদ্ধি বের করে দিয়েছে, কীভাবে দিনে ভোট ডাকাতি করা যায়।’

জোনায়েদ সাকি বলেন, বড় বড় প্রকল্প হচ্ছে, তথাকথিত উন্নয়ন হচ্ছে, একদল লোক ধনী হচ্ছে। কিছু জায়গায় চাকচিক্য বাড়ছে। আর ৯৫ শতাংশ মানুষ সংকটের মধ্যে সময় পার করছেন। বানরের তেল মাখা বাঁশে ওঠা আর নামার মতো অবস্থা তাঁদের। টাকার মান অর্ধেকের নিচে নেমে আসছে। সাধারণ মানুষ প্রতিদিন চাল, ডাল, তেল, মরিচ কেনে; বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ বিল এসব দিতে হয়—এসবের খরচ বেশি বেড়েছে। শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের পকেটই কাটা যাচ্ছে।

দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে এই সরকার টিকে আছে—এমন মন্তব্য করে জোনায়েদ সাকি বলেন,  ‘রাষ্ট্রের যত প্রতিষ্ঠান আছে—প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ওপর মহলের ক্ষমতার সব স্তরে লুটপাটের ভাগ পৌঁছে দিচ্ছে। ভাগ দেওয়ার কাজটা করে সরকার সবাইকে তার শাসনের অংশীদার করছে। সরকার চাইলেও এখন এটা বন্ধ করতে পারবে না। এর পরিণতিতে সরকার ১৬ লাখ কোটি টাকা ঋণ করেছে। যে পরিমাণে অর্থ পাচার হয়েছে, আমাদের রিজার্ভের যে অবস্থা, তাতে এই দেশ দেউলিয়াত্বের দিকে যাচ্ছে।’

সাকি বলেন, আগে চুরি-ডাকাতি করলেও একটা জবাবদিহির জায়গা ছিল যে পাঁচ বছর পর জনগণের কাছে ভোট চাইতে হবে। মানুষের হাতে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা ছিল। এই সরকার ভোট বাতিল করে দিয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে ক্ষমতার যারা খুঁটি—প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রের নানা প্রতিষ্ঠান তাঁদের নানা অন্যায় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।

আয়োজক সংগঠনের খুলনা জেলার আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেলের সভাপতিত্বে ও জেলা সদস্য আল আমিন শেখের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য দেওয়ান আবদুর রশীদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) খুলনা মহানগরের সভাপতি খান লোকমান হাকিম, নাগরিক ঐক্যের খুলনা মহানগরের সদস্যসচিব কাজী মোতাহার রহমান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শেখ আবদুল হালিম, গণসংহতি আন্দোলনের ঝিনাইদহের আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, ফুলতলা উপজেলার আহ্বায়ক মো. অলিয়ার রহমান প্রমুখ।

সভা শেষে খুলনা জেলা কমিটির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মুনীর চৌধুরী সোহেলকে আহ্বায়ক ও কামরুজ্জামান টুকুকে সম্পাদক করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।