খুলনায় ব্যবসায়ীদের হামলায় বন্ধ হলো বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান

রূপসা নদীর পাড়ে শিপইয়ার্ড সড়কের পাশে বিআইডব্লিউটিএ উচ্ছেদ অভিযান করতে গেলে বিক্ষোভ করে কাঠ ব্যবসায়ীরা। খুলনা নগরের রূপসা পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

খুলনা নগরের রূপসা নদীর পশ্চিম পাশ উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) খুলনা বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় ওই দপ্তরের একটি এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) ও একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন ওই এলাকার ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা।

সোমবার বেলা ১১টার দিকে ওই অভিযানে গিয়েছিল খুলনা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, ব্যবসায়ীদের হামলায় তাঁদের সুপারভাইজার আক্তার হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অনুকূল কুমার ঘোষ, পাইলট নুরুল হক, অফিস সহায়ক কুদ্দুস মোল্লাসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের হামলার কারণে তাঁরা উচ্ছেদ অভিযান না করেই ফিরে এসেছেন। গত ১০ জানুয়ারি ওই এলাকায় অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য ব্যবসায়ীদের নোটিশ করা হয়েছিল।

রূপসা নদীর পশ্চিম পাশের তীরঘেঁষে অনেক কাঠগোলা ও কাঠ কাটার যন্ত্র রয়েছে। মূলত সেগুলোই উচ্ছেদ অভিযানে গিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১০টার দিকে খননযন্ত্র নিয়ে ওই এলাকায় অভিযানে যান বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। এ সময় তাঁদের দেখে ব্যবসায়ীরা খেপে যান। তাঁরা সংঘবদ্ধ হয়ে উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেন। পরে ব্যবসায়ীরা বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। ব্যবসায়ীরা শিপইয়ার্ড সড়কের ওপর কাঠের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে যান চলাচল বন্ধ থাকার পর সদর থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও গুঁড়ি উঠিয়ে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, তাঁরা ওই এলাকায় ৪০-৪৫ বছর ধরে কাঠের ব্যবসা করছেন। এলাকাটি সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে তাঁরা সেখানে ব্যবসা করতে চান। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ তাঁদের কাছে ইজারা না দিয়ে বা অন্য জায়গায় ব্যবসা করার ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ অভিযান করতে আসে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা বাধা দিয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িসহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। খুলনা নগরের রূপসা পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

খুলনা বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নদীর পাড় রক্ষা করার জন্য ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়। গত ১০ জানুয়ারি ব্যবসায়ীদের নোটিশ করে সেখান থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে বলা হয়। কিন্তু সরিয়ে না নেওয়ায় আজ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের হামলার শিকার হয়েছেন তাঁরা। বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাসলিমা আক্তার ওই অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের ইজারা নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এলাকাটি ইজারা নিতে চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের আবেদন করতে হবে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি চান তাহলে ইজারা দেওয়া যেতে পারে।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন খান বলেন, ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।