‘কৌতুক অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক বিধানসভার সদস্য হতে পারলে আমাকে নিয়ে আপত্তি কেন?’

আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম
ছবি: প্রথম আলো

আদালতের আদেশে বগুড়ার দুই আসনে নির্বাচনের প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম বলেছেন, তাঁর টাকা ও প্রভাব নেই। তবে স্বপ্নজয়ের সাহস ও সততা আছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৌতুক অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক বিধানসভার সদস্য হতে পারলে তাঁর জাতীয় সংসদে যাওয়া নিয়ে কেন আপত্তি, সেটা তিনি বুঝতে পারেন না।

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে হিরো আলম হাইকোর্টে রিট করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। তাঁর করা পৃথক রিটের শুনানি শেষে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মনোনয়নপত্র গ্রহণ এবং তাঁকে প্রতীক বরাদ্দ দিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে (জেলা প্রশাসক) নির্দেশ দিয়েছেন।

হাইকোর্ট থেকে রিটের আদেশের প্রতিলিপি নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার সময় হিরো আলম নানা বিষয়ে কথা বলেন। দুই দুটি আসনে প্রচারণা চালাবেন কীভাবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অল্প সময়ে দুই আসনে প্রায় সাত লাখ ভোটারের কাছে পৌঁছানো অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হবে। সবার কাছে হয়তো সরাসরি পৌঁছাতে পারব না। গণসংযোগের পাশাপাশি মুঠোফোন ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সক্রিয় প্রচারণা চালাব। নির্বাচনী এলাকা নিয়ে আমার উন্নয়ন পরিকল্পনা, মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন নিয়ে আমার স্বপ্নের কথা ভোটারের কাছে তুলে ধরব। মানুষের ভালোবাসায়ই আমি হিরো আলম। মানুষ আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠালে তাঁদের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করব।’

আরও পড়ুন

দুই আসনেই হেভিওয়েট প্রার্থী আছেন, তাঁদের ভিড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কতটুকু সুবিধা করতে পারবেন—জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব জগৎ থাকে, যার জগতে সে রাজা। আমি আমার জগতে রাজা। নির্বাচন করতে নেমেছি। মাঠে কে দাঁড়াল, কে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী, এসব ভাবার সময় নেই।’ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাধা পেরিয়ে লড়াই-সংগ্রাম ছাড়া আমি জীবনে কোনো কিছুই পাইনি। শত অসাধ্যকে সাহস আর দৃঢ় আত্মবিশ্বাস দিয়ে জয় করেছি। কোনো কিছুতেই হারতে শিখিনি। নির্বাচনেও হারব না। জয়ের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। বারবার হয়তো হারব। কিন্তু একদিন বিজয়ী হয়ে সংসদে যাবই। লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই থামাব না। আমার টাকা ও প্রভাব নেই। তবে স্বপ্ন জয়ের সাহস ও সততা আছে।’

সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে সবার আগে কোন কাজটা করবেন—জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য বেশি করে কলকারখানা স্থাপনে কাজ করব। ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর জন্য সংসদে কথা বলব। অভাবের কারণে নিজে পড়ালেখা করতে পারিনি। এলাকার গরিব শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে বগুড়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সংসদে কথা বলব। বগুড়া শহরকে সিটি করপোরেশন ঘোষণার দাবি তুলে ধরব।’

সংসদে যাওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নকারীদের বিষয়ে জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে মানুষের ভালোবাসা আর নিজের অদম্য সাহস দিয়ে জিরো থেকে আজ আমি হিরো আলম। শৈশবে টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারিনি। অনাহারে থেকেছি। চানাচুর বিক্রি করেছি। কেউ কিন্তু একমুঠো ভাত দেয়নি, এক টাকা সাহায্যও করেনি। একসময় সিডির দোকান করেছি, কেব্‌ল–সংযোগের ব্যবসা করেছি। সেই সুবাদে মিউজিক ভিডিও তৈরি শুরু করি। ইউটিউবে আমার প্রায় এক হাজার মিউজিক ভিডিও আছে। মানুষ ভালোবেসে তা দেখেছে বলেই আমি হিরো আলম। মানুষের ঠাট্টা-তামাশা নিয়ে ভাবি না, আমি আমার মতো পথ চলি।

আরও পড়ুন

পশ্চিমবঙ্গের অনেক অভিনেতা বিধানসভার সদস্য হয়েছেন। রাজনীতি ও অভিনয় একসঙ্গে করছেন। কৌতুক অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক বিধানসভার সদস্য হতে পারলে আমাকে নিয়ে মানুষের এত আপত্তি কেন?’

বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ ও বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন গত ১১ ডিসেম্বর স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। আসন দুটি শূন্য ঘোষণার পর ১ ফেব্রুয়ারি ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।