সিলেটে দলীয় প্রার্থীকে পাশ কাটিয়ে নৌকায় ভোট চাইলেন জাপার কেন্দ্রীয় নেতা

সিলেটে আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভায় নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চান জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী। গতকাল শুক্রবার রাতে নগরের ঝেরঝেরিপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে পাশ কাটিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে দলটির কেন্দ্রীয় এক নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই নেতার নাম ইয়াহ্‌ইয়া চৌধুরী। তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তবে গত বছর জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার রাতে নগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঝেরঝেরিপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা হয়। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী নৌকা প্রতীকে ভোট চান। অথচ সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বাবুল দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।

আরও পড়ুন

এদিকে নৌকার পক্ষে ইয়াহ্ইয়ার ভোট চাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে জাতীয় পার্টিতে। সিলেটে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাওয়া নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ইয়াহ্ইয়া নৌকায় ভোট চাওয়ায় দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। বিষয়টি দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে জানানো হয়েছে। কেন্দ্র তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।

মতবিনিময় সভায় ইয়াহ্‌ইয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মত ও পথের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে উন্নয়নের স্বার্থে, সিলেটকে শান্তির শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমরা সেই ধারায় চলতে চাই। উন্নয়নের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমি বিশ্বাস করি, আগামী ২১ জুন এলাকাবাসী উন্নয়নের জন্য নৌকাকে বেছে নেবে। আমি দলীয় পরিচয় ভুলে গিয়ে আপনাদের কাছে ওনার (আনোয়ারুজ্জামান) পক্ষে ভোট চাইছি।’

আরও পড়ুন

জানতে চাইলে ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গত বছর জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। এখন আমি শুধুই দলটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য। জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়েও আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এমনকি দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’ তিনি বলেন, মতবিনিময় সভায় এলাকার বাসিন্দা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। সেটা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না।

ওই মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যের শুরুতে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত দুজন কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম উচ্চারণ করায় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

আরও পড়ুন

স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তৃতায় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচজন কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম উল্লেখ করেন। এর মধ্যে দুজনই বিএনপিপন্থী। তাঁরা হলেন সাবেক ছাত্রদল নেতা সালমান চৌধুরী (শাম্মী) ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি কামরুন নাহার চৌধুরী। ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগপন্থী একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থীর এভাবে বিএনপিপন্থী সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম উচ্চারণ করা উচিত হয়নি।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে সিলেট সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২ জুন। আগামী ২১ জুন ইভিএমে ভোট হবে।