ভালুকের শরীরে পচন ধরার ঘটনায় আলোচনায় এসেছে ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে পরিচালিত মিনি চিড়িয়াখানাটি। এখানকার কর্মীরা চিড়িয়াখানাটির অনুমোদন ও প্রাণীগুলো আমদানির কাগজপত্র আছে দাবি করলেও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বলছে, চিড়িয়াখানাটির কোনো অনুমোদন নেই।
সিটি করপোরেশন থেকে মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান চিড়িয়াখানার জমিটি বরাদ্দ নিয়েছিল। কর্মী ও আশপাশের লোকজনের ভাষ্য, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ইকরামুল হক (টিটু) এখানে প্রাণীর জোগান দিতেন। আর সামনে থেকে চিড়িয়াখানাটি পরিচালনা করতেন সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান।
২০১৩ সালে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনি চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়। ৩০ টাকায় টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানাটিতে ঢুকতে পারেন। পরের বছর থেকে চিড়িয়াখানাটিতে প্রাণীর দেখাশোনা করছেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, কুমির, ভালুক, হরিণসহ ২৩ প্রজাতির প্রাণীর অনুমোদন আছে। তাঁর কাছে কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি কিছু দেখাতে পারেননি।
কামাল হোসেন বলেন, সাবেক মেয়র (ইকরামুল হক) বেশির ভাগ সময় প্রাণীর ব্যবস্থা করতেন। বেশির ভাগ প্রাণী ঢাকা থেকে আনা হতো। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থাকলেও সাবেক মেয়র ও কাউন্সিলর কীভাবে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজনের নামে লাইসেন্স নিলেও চিড়িয়াখানাটি চালাতেন তাঁরাই (সাবেক মেয়র ও কাউন্সিলর)। অনেক লোক আছে ঢাকা থেকে এসে প্রাণী দিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি শুধু লাইসেন্স আছে। কিন্তু কত সালে লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে, এসব জানি না।’
সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করায় এখানে ব্যবস্থাপক হিসেবে কেউ দায়িত্ব পালন করতেন না বলে জানালেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, কাউন্সিলরই এসে টাকাপয়সা নিতেন। কাউন্সিলর জেলে যাওয়ার পর তাঁর জামাতা দেখাশোনা করছেন। সাইনবোর্ডে ২৩ প্রজাতির প্রাণীর কথা বললেও এখন প্রায় ৩০ থেকে ৩২ প্রজাতির প্রাণী আছে।
সাবেক মেয়র ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক গত ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে আছেন। আর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান গত ৮ মার্চ গ্রেপ্তার হন। সে কারণে তাঁদের দুজনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
চিড়িয়াখানাটির যে অনুমোদন নেই, তা নিশ্চিত করেছেন বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক। তিনি মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি জমি ইজারা নিয়ে এটি করা হয়েছিল।
একই ইউনিটের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাসও বলেন, ‘আমি যত দূর জানি, অনুমোদন নেই চিড়িয়াখানাটির। বেশ কিছুদিন ধরে অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল। চিড়িয়াখানায় অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
চিড়িয়াখানার জন্য সিটি করপোরেশন শুধু জমি বরাদ্দ দিয়েছে জানিয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ বলেন, সেখানকার প্রাণীর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের নয়। যদি প্রাণীদের সুরক্ষা দিতে না পারে ও চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে; তাহলে ইজারা বাতিলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমানের কথা জানা গেল সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান তাঁর শ্যালকের নামে চিড়িয়াখানাটির জায়গা বরাদ্দ নিয়েছিলেন। প্রয়োজনে বিনা নোটিশে বরাদ্দ বাতিল করা হবে, এ শর্তে জায়গাটি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।