আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেই কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়। আজ শুক্রবারও বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা–কর্মীরা।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে ব্লকেড কর্মসূচি হয়েছে। আজ বিকেল চারটার দিকে শুরু হওয়া কর্মসূচিতে এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র ও যুব আন্দোলন, রেড জুলাইসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা–কর্মীরা অংশ নিয়েছেন। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কর্মসূচি চলছিল। এ সময় তাঁরা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আওয়ামী লীগ, ব্যন ব্যন’সহ নানা স্লোগান দেন।
বরিশালে দেড় ঘণ্টাব্যাপী ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার রাত আটটার দিকে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ‘বরিশালের সর্বস্তরের ছাত্র আন্দোলন ও জনতা’র ব্যানারে এ কর্মসূচি শুরু হয়। রাত সোয়া ৯টার দিকে আন্দোলনকারীরা সংবাদ সম্মেলন করে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে আপাতত অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। এর আগে বিকেল ৫টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংহতি সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলা ও মহানগর কমিটি।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। এতে ওই লেনে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। এ ছাড়া শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা নগরের পুবালি চত্বরে মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। এতে এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এবি পার্টির নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরের পাশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মো. আতাউল্লাহ। আজ দুপুরে নগরের তালাইমারীর বিজয় ২৪ চত্বরে শিক্ষার্থীরা আবারও বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এই কর্মসূচিতে অংশ নেন হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা।
সিলেটে আজ বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতভর একই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
রংপুরে আজ বেলা ২টার পর নগরের জিলা স্কুল থেকে মিছিল বের করা হয়। এতে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, গণ অধিকার পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও যুবদলের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। পরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
কুড়িগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় কুড়িগ্রাম শাপলা চত্বরে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
নড়াইলে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে সদর উপজেলার মালিবাগ এলাকায় ঢাকা-বেনাপোল মহাসড়কে এ কর্মসূচি পালিত হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর থেকে কিছু সময় ধরে মহাসড়ক আটকে এ কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষোভকারীরা। পরে যানজট সৃষ্টি হলে তাঁরা সড়কটি ছেড়ে দেন।
লক্ষ্মীপুরে শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। বিকেলে তাঁরা শহরের উত্তর তেমুহনী থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন, যা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ঝুমুর চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় সেখানে সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
নোয়াখালীতে ‘জুলাই ঐক্য’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে জেলা শহর মাইজদীর জামে মসজিদ মোড়ের মাইজদী-সোনাপুর সড়কে এই কর্মসূচিতে এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা অংশ নেন।
রাতে সাভার, টঙ্গী, সিদ্ধিরগঞ্জে অবরোধ
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে এনসিপি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা। সাভারের পাকিজা এলাকায় শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আন্দোলনকারীরা অবরোধ শুরু করেন। রাত ১০ টা ৫০ মিনিটের দিকে মহাসড়ক থেকে সরে গিয়ে হ্যান্ডমাইকে প্রথমে ২০ মিনিটের জন্য অবরোধ কর্মসূচি বিরতি ঘোষণা করা হয়। পরে শনিবার বিকেল ৩টা থেকে আবারও ‘ব্লকেড কর্মসূচি’ পালন করার ঘোষণা দিয়ে রাত ১১টা ২০মিনিটের দিকে চলে যান আন্দোলনকারীরা।
একই দাবিতে শুক্রবার রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা টঙ্গী কলেজ গেট এলাকার শফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজের সামনে এই অবরোধ করেন।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায়ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা। শুক্রবার রাত ৯ টা থেকে এই অবরোধের কারণে ঢাকামুখী অংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরে রাত সোয়া ১১টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করেন আন্দোলনকারীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও (জাবি) বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]