জয়ী ও পরাজিত উভয়ের সমর্থকেরাই বাজালেন বিজয়ের বাদ্য

বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের বিজয়োল্লাস
ছবি: প্রথম আলো

তখন রাত আটটা বেজে গেছে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দিঘা গ্রামের ঋষিপাড়ার ব্যান্ড পার্টিকে ধরে এনে আনারস প্রতীকের বিজয় মিছিলে বাদ্য বাজিয়ে নেওয়া হলো। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আবার ডাক পড়ল ব্যান্ড পার্টির সদস্যদের। এবার মোটরসাইকেল প্রতীকের বিজয় মিছিলে তাঁদের ব্যান্ড বাজাতে হলো। গতকাল বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ দফার এ নির্বাচনে বাঘা উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিনের প্রতীক ছিল মোটরসাইকেল। আর রাজশাহী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রোকনুজ্জামানের প্রতীক ছিল আনারস। এই নির্বাচনে তাঁরা দুজনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, আর কোনো প্রার্থী ছিলেন না।

ভোট গ্রহণ শেষে সব কেন্দ্র থেকে ফলাফল উপজেলার নিয়ন্ত্রণকক্ষে আসার আগেই আনারস প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকেরা ঘোষণা দিয়ে দেন, তাঁরা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। বিভিন্ন দিক থেকে বিজয় মিছিল আসতে থাকে। ফেসবুকে বন্ধু-সমর্থকেরা আনারস প্রতীকের প্রার্থী রোকনুজ্জামানের ছবি দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে থাকেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এরই মধ্যে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের দিঘা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমানের নেতৃত্বে স্থানীয় ঋষিপাড়ার ব্যান্ড পার্টির লোকজনকে নিয়ে এসে দিঘা বাজার এলাকায় বিজয় উৎসব করা হয়। পাশাপাশি ভোজের আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ সময় মোটরসাইকেলের সমর্থকেরা মন খারাপ করে ঘরে ঢুকে যান।

এরপর রাত সোয়া ১০টার দিকে খবর আসে, মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। তখন আনারসের সমর্থকেরা ভোজের আয়োজন গুটিয়ে ঘরে উঠে যান। এ সময় মোটরসাইকেলের সমর্থকেরা আবার ঋষিপাড়ার ব্যান্ড দলকে নিয়ে আসেন। ব্যান্ড পার্টির সদস্যরা একইভাবে মোটরসাইকেলের উৎসবে বাদ্য বাজাতে শুরু করেন।

শুধু তা–ই নয়, আজ বৃহস্পতিবার সকালে আবার ঋষিপাড়ার ব্যান্ড দলকে ডাকা হয়। সকালে সারা ওয়ার্ড ঘুরে তাঁরা মোটরসাইকেলের বিজয় উৎসবে নতুন করে বাজনা বাজান। এই দলে নেতৃত্ব দেন রমেন দাস। জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাত আটটার পরে তাঁদের আনারসের বিজয় মিছিলে বাজানোর জন্য ডাকা হয়েছিল। তখন তাঁরা কিছুই জানতেন না। বাজিয়ে বাড়িতে গিয়ে শুয়ে পড়েছিলেন। রাত ১০টার পর খবর এল মোটরসাইকেল জিতেছে। তখন তাঁরা আবার এসে মোটরসাইকেলের বিজয় উৎসবে বাজনা বাজিয়েছেন।

কিসের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ফলাফলের আগেই বিজয় মিছিল করা হয়েছিল, জানতে চাইলে দিঘা গ্রামের আনারসের সমর্থক দিঘা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান বলেন, উত্তেজনার মুহূর্তে ফোনে শোনা ফলাফল যোগ করতে হয়তো তাঁদের ভুল হয়েছিল। এ জন্য বিভ্রান্তিটা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, তাঁদের চরে একটি ইউনিয়ন রয়েছে। সেখান থেকে নির্বাচনী ফলাফলসহ নির্বাচনী কর্মকর্তারা ফিরতেই প্রায় রাত আটটা বেজে যায়। এদিকে ততক্ষণে বিজয় মিছিল শুরু হয়ে গেছে। এটা ওই প্রার্থীর সমর্থকদের অপরিপক্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে হয়েছে। তাঁরা যদি প্রতিটি কেন্দ্রের এজেন্টদের কাছ থেকে পাওয়া ফলাফল যোগ করে দেখতেন, তাহলে এই বিভ্রান্তি হতো না।

চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তরিকুল ইসলাম বলেন, তাঁরা নির্ভুলভাবে ফলাফল তৈরি করার জন্য একই সঙ্গে এন্ট্রি সফটওয়ারে এন্ট্রি করেছেন, কম্পিউটারে ইনপুট দিয়েছেন এবং ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে যোগ করেছেন। তিনটা মিলিয়ে তাঁরা স্লো অ্যান্ড স্টিডি ওয়েতে কাজ করেছেন। তাতেও খুব বেশি বিলম্ব হয়নি। রাত ১০টার পরপরই তাঁরা ফলাফল ঘোষণা করে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর আগেই কোনো প্রার্থীর সমর্থকদের বিজয় মিছিল করা ঠিক হয়নি। এতে তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।