নানা পদের ভর্তায় কাওসারের দোকানের পিঠার চাহিদা বেড়েছে

গরম-গরম বাহারি পিঠা খেতে কাওসার খানের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। বুধবার রাতে পটুয়াখালী জেলা শহরের সার্কিট হাউস-সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালী জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে শীতের সন্ধ্যায় বসছে পিঠার দোকান। গরম পিঠার ধোঁয়ায় ছড়িয়ে পড়ে নতুন চালের গন্ধ। বাহারি গরম পিঠা খেতে ভিড় করছেন স্থানীয় লোকজন।

জেলা শহরের সার্কিট হাউস-সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সন্ধ্যায় নানা ধরনের ভর্তা ও পিঠার পসরা নিয়ে বসেন কাওসার খান (৩০) নামের এক যুবক। বিভিন্ন মাছ ও সবজির মিশ্রণে তিনি তৈরি করেন সুস্বাদু ভর্তা, যা খেতে শিশু-নারীসহ নানা বয়সী মানুষ ভিড় জমান।

বুধবার রাতে কাওসার খানের দোকানে বেশ কিছু বাটিতে সাজানো রূপচাঁদা, চ্যাবা, টাকি, ইলিশ, পুঁটি, শুঁটকি ও কাঁচা চিংড়ি মাছের ভর্তা দেখা গেল। আরও আছে শর্ষে, আলু, বেগুন, থানকুনি পাতা, ধনেপাতা, কাঁচা মরিচ ও কাঁচা-পাকা টমেটো এবং শীতকালীন শাকসবজির ভর্তা। কাওসার জানালেন, পাঁচ মিশালি ভর্তাসহ তাঁর দোকানে আছে ২০ থেকে ২৫ প্রকারের ভর্তা। বিভিন্ন ভর্তার কারণে তাঁর দোকানে পিঠার চাহিদা বেড়ে গেছে।

কাওসার খানের বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি এক সময় ঢাকার ধানমন্ডির গ্রিন রোডে পিঠা বিক্রি করতেন। ছয় মাস আগে বাবা মারা গেলে নিজ গ্রামে আসেন। এরপর সরকার পতনের পর নানা সংকটে দুঃসময় চলে তাঁর। এরই মধ্যে নতুন করে পিঠার বিক্রির উদ্যোগ নেন তিনি। দুই মাস আগে শহরের সার্কিট হাউস-সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পিঠার দোকান বসান।

নানা পদের ভর্তা দিয়ে কাওসার খানের দোকানে পিঠা খেতে মানুষের ভিড়। বুধবার রাতে পটুয়াখালী জেলা শহরের সার্কিট হাউস-সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

কাওসার খান বলেন, প্রথমে ক্রেতাদের তেমন সাড়া মেলেনি। পরে নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে নানা ধরনের ভর্তার আইটেম করেন। এতে তাঁর দোকানের পিঠার চাহিদা বেড়ে যায়। এখন প্রতিদিন তিন–চার হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হয়। এতে যা লাভ হয়, তা দিয়ে স্ত্রী ও শিশুসন্তানের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে পারছেন তিনি।

কাওসারের পিঠা তৈরি ও বিক্রির কাজে সহায়তা করেন তাঁর ছোট বোন সুমী আক্তার। ভাই–বোন মিলে শীতের পিঠা বিক্রি বেশ জমিয়েছেন। ব্যবসার লাভের একটি অংশ সুমীকেও দেন তিনি।

কাওসারের দোকানের আশপাশে আরও ১০টি পিঠার দোকান আছে। এ ছাড়া শহরের কলাতলা, নিউমার্কেট চত্বর, লঞ্চঘাট, হেতালিয়া বাঁধঘাট, সোনালী ব্যাংক চত্বর, পিডিএসএ মাঠ, সিটাইপ ও বিটাইপ এলাকা বিভিন্ন স্থানে আছে পিঠার দোকান। এসব দোকানে চিতই, ভাপা, পাটিসাপটা, পুলিসহ বিভিন্ন পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। পিঠা তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগ নারী। তাঁরা দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী। শীত মৌসুমে শীতের পিঠা বিক্রি করে তাঁদের সংসার চলে।

নিউমার্কেট চত্বরে পিঠার বিক্রেতা আনোয়ারা বেগম বলেন, তাঁর স্বামীর একার পক্ষে সংসার চালানো কঠিন। তাই সন্ধ্যার পর পিঠা বিক্রি করেন। প্রতিদিন এক–দেড় হাজার টাকা বিক্রি করলে অর্ধেক লাভ হয়, যা দিয়ে দিন ভালোই কাটছে।