জোটের সমীকরণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনে হতে পারে ত্রিমুখী লড়াই
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই দফায় ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে বহুল আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ (সরাইল–আশুগঞ্জ ও বিজয়নগরের একাংশ) আসনে এখনো বিএনপির কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। আসনটি বিএনপি জোটের শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বিএনপির সঙ্গে জমিয়তের আসন সমঝোতা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে শরিক দলটিকে চারটি আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে দলের বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২।
আসনটি বিএনপির ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত। এরপর আছে লাঙ্গলের অবস্থান। এখানে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাতটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ছয়বার, লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ৯ বার অংশ নিয়ে তিনবার ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পাঁচবার অংশ নিয়ে একবার আর স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন দুবার। এ আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট তাদের শরিকদের দুবার ছাড় দিয়ে একবার জয়ী হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট তাদের শরিকদের পাঁচবার ছাড় দিয়ে জয় পেয়েছে দুবার।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনে বিএনপি এখনো প্রার্থী ঘোষণা না করায় গুঞ্জন আছে যে এখানে জোটের শরিক কাউকে ছেড়ে দেবে দলটি। এখানে বিএনপির চারজন দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছেন। তাঁরা হলেন সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ মো. শামীম, জেলা বিএনপির সদস্য আহসান উদ্দিন খান ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে।
এই চার প্রার্থীর মধ্যে অনেকেই গা ছাড়াভাবে প্রচারণায় থাকলেও রুমিন ফারহানা হাল ছাড়েননি। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মাঠে আছেন। এখনো তিনি মাঠে আছেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহে তিনি এলাকায় এসে গণসংযোগসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। মাঠপর্যায়ে দলীয় নেতা–কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের কাছে রুমিন ফারহানার জনপ্রিয়তা আছে। ইতিমধ্যে তাঁর সভা–সমাবেশে লোকজনের ব্যাপক উপস্থিতি চোখে পড়ছে। দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার প্রচারণা চালাচ্ছেন জোরেশোরেই। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, মার্কা যা–ই হোক, সরাইল–আশুগঞ্জ থেকেই তিনি নির্বাচন করবেন।
এই আসনে এবারও বিএনপি তাদের শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের (খেজুরগাছ) সহসভাপতি জুনায়েদ আল হাবিবীকে ছেড়ে দেবে বলে গুঞ্জন আছে। জুনায়েদ আল হাবিবীও এমন কথা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রচার করছেন।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) কোনো প্রার্থীকেও মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তবে শেষ পর্যন্ত জাপার দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা জাপার একাংশের প্রার্থী হতে পারেন।
জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ৮–দলীয় জোটের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর জেলা কমিটির সভাপতি ও দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মোবারক হোসেনকে অনেক আগে থেকেই মাঠে দেখা যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর এই প্রার্থীর আগে তেমন পরিচিতি না থাকলেও কয়েক মাস ধরে উঠান বৈঠক ও গণসংযোগে বর্তমানে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। এ ছাড়া ৮–দলীয় জোটের শরিক ইসলামী আন্দোলনের (হাতপাখা) নেছার আহমাদ আন নাছিরীও প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন। ইতিমধ্যে তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
শেষ পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী যদি জুনায়েদ আল হাবিবী ও ৮–দলীয় জোটের প্রার্থী মোবারক হোসেন হন, আর রুমিন ফারহানা যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন, তবে লড়াইটা হবে ত্রিমুখী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনটি বর্তমানে সরাইল, আশুগঞ্জ ও বিজয়নগর উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার আছেন ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৪৪৮ জন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ভোট আছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৯টি, আশুগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯ ও বিজয়নগর উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ভোট আছে ৫৭ হাজার ৭৪০টি।