১৬ বছরে কুষ্টিয়ায় ২৬২টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স, জমা পড়ল ২৪১টি
আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে কুষ্টিয়ায় বিভিন্ন ধরনের ২৬২টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। যার বেশির ভাগই শটগান, পিস্তল ও রিভলবার। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার মধ্যে সেসব অস্ত্র জমা নিকটস্থ থানায় দেওয়ার নির্দেশ দেয় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জেলার সাতটি থানায় ২৪১টি অস্ত্র জমা হয়েছে। জমা দেওয়ার বাইরে ছিল ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র। বিধি মোতাবেক এখন সেগুলো অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। সেগুলো উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান চালানো হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য দেওয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। এসব অস্ত্র ও গুলি ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে থানায় জমা দিতে বলা হয়। ২৭ আগস্ট ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আখতারের দেওয়া গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, থানায় অস্ত্র জমা না দেওয়া হলে তা অবৈধ অস্ত্র হিসেবে গণ্য করে অস্ত্র আইনে মামলা হবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় মোট ২৬২টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইন্সেস দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিস্তল ও রিভলবার ৫১টি। বাকিগুলো শটগানসহ অন্যান্য অস্ত্র। সবচেয়ে বেশি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সদর থানায় ৭৮টি। এরপর দৌলতপুরে ৬২টি, ভেড়ামারায় ৩৮টি, মিরপুরে ৩২টি, খোকসায় ১৬টি ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার আওতায় চারটি অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। ২০১০, ২০১২ ও ২০১৩ সালের দিকে সবচেয়ে বেশি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, এই তিন বছরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ী ও ঠিকাদাররা এসব অস্ত্রের লাইসেন্স নেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার আওতায় দেওয়া ৭৮টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ১৭টি, মিরপুরে ৩২টির মধ্যে ৬টি, ভেড়ামারায় ৩৮টির মধ্যে ৮টি, দৌলতপুরে ৬২টির মধ্যে ৬টি, কুমারখালীতে ৩২টির মধ্যে ৯টি, খোকসায় ১৬টির মধ্যে ৪টি ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একটি পিস্তল ও রিভলবার আছে। গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত মিরপুর, দৌলতপুর, কুমারখালী ও খোকসার আওতাধীন সব আগ্নেয়াস্ত্র জমা হয়েছে। সদরে ১৮টি, ভেড়ামারায় একটি ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার আওতাধীর দুটি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান তাঁর লাইসেন্স করা পিস্তল বা রিভলবার জমা দেননি।
আতাউর রহমান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুর্বৃত্তরা কুষ্টিয়া শহরে তাঁদের দুই ভাইয়ের দুটি আলিশান বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। দফায় দফায় হামলার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি বহুতল ভবনের ইট পর্যন্ত খুলে নেওয়া হয়েছে। স্ত্রীসহ আতাউরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলছে। আতাউরের ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগেয়াস্ত্র লাইসেন্স বাতিল ও থানায় জমা দিতে সরকারি বেসরকারিভাবে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। অধিকাংশ অস্ত্রই থানায় জমা পড়েছে। যেসব অস্ত্র জমা পড়েনি সেগুলোর উদ্ধারে যৌথ বাহিনী মাঠে কাজ করবে।’
কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আখতার প্রথম আলোকে বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনার জন্য সভা করা হয়েছে। অভিযানে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা থাকবেন। তবে বেশির ভাগ অভিযানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা থাকবেন। সীমান্ত এলাকায় অভিযানে বিজিবির সদস্যরা থাকবেন।