দারিদ্র্য জয় করতে সেই বিশ্বনাথকে অটোভ্যান দিল প্রশাসন
শরীয়তপুর শহরের ঋষিপাড়া এলাকার দরিদ্র বাসিন্দা বিশ্বনাথ ঋষিকে ব্যবসা করে দারিদ্র্য জয় করতে ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যান (অটোভ্যান), কিছু জুতা ও স্যান্ডেলসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিকল্প কর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতায় গতকাল বুধবার বিকেলে শরীয়তপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিশ্বনাথ ঋষির হাতে এসব তুলে দেন জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান।
দরিদ্র বিশ্বনাথ ঋষি শহরের শিশুকানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সামনে বসে জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন। এ থেকে আয় দিয়ে তাঁর সংসার চলত অনেক কষ্টে। এ নিয়ে গত বছরের ১১ অক্টোবর ‘চার প্রজন্ম ধরে কেবল দারিদ্র্যই দেখে এসেছি’ শিরোনামে প্রথম আলোর অনলাইনে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর তাঁকে পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নেয় শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রশাসন।
শরীয়তপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঋষিপাড়া এলাকায় বিশ্বনাথ ঋষির বসবাস। বাবার অভাবের সংসারে পড়ালেখার সুযোগ পাননি। ১৩ বছর বয়সে জুতা সেলাইয়ের সরঞ্জাম ও কাঠের বাক্স কাঁধে রাস্তায় নামতে হয় বিশ্বনাথকে। আশির দশকে তিনি ছোট্ট পালং থানা সদরের (বর্তমান জেলা সদর) অলিগলি ঘুরে জুতা সেলাই ও পলিশের কাজ শুরু করেন। এরপর পালং বাজারের উত্তর মাথা, পালং থানার সামনে, সিনেমা হলের সামনে ও বটতলা এলাকায় ফুটপাতে বসে এসব কাজ করেন। ১০ বছর ধরে বসছেন শিশুকানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সামনে। এ কাজ করে প্রতিদিন ২০০ টাকা আয় করেন, যা দিয়ে সংসার চালাতে পারেন না।
বিশ্বনাথ ঋষির বাবা পরেশ ঋষি ২০০২ সালে মারা যান। ৮৫ বছর বয়সী মা ননী বালা ঋষি ছেলের সঙ্গে থাকেন। বিশ্বনাথের এক ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে স্থানীয় বাজারে সেলুনে কাজ করেন। প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের পর শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র পরিবারটির পাশে দাঁড়ান। তখন উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আর্থিক ও খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। এরপর বিকল্প কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়।
গতকাল সমাজসেবা অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫ ব্যক্তিকে বিকল্প কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন করা হয়। তাঁদের মধ্যে গবাদিপশু, অটোভ্যান ও ক্ষুদ্র ব্যবসাসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম তপাদার, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক বিশ্বজিৎ বৈদ্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র প্রমুখ।
বিশ্বনাথ ঋষি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চার প্রজন্ম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছি। জুতা সেলাইয়ের কাজে এখন আর তেমন আয় নাই। আমারে একটা অটোরিকশা দেওয়া হইছে। এটা দিয়া নতুন করে অভাব জয়ের চেষ্টা করমু।’
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বনাথ ঋষির দারিদ্র্যের কথা জেনে তাঁরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এ সামান্য উপহারে হয়তো তাঁর দারিদ্র্য কমবে না, তবে তিনি অন্তত বেঁচে থাকার শক্তি ও ভরসা পাবেন।
জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সমাজে অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছেন। তাঁদের খুঁজে বের করে পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা যেটা করছেন, সেটা হয়তো ছোট উদ্যোগ, কিন্তু একটি দরিদ্র পরিবারের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তা বড় ভূমিকা রাখবে।