‘এমপিকে কটাক্ষ করে স্ট্যাটাস দেওয়ায়’ যুবদল নেতাকে কুপিয়ে জখম

এক দিন আগে ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দেন যুবদল নেতা মারুফ হোসেন। তাঁর দাবি, এ কারণেই তাঁর ওপর হামলা হয়েছে।

মাগুরায় একদল অস্ত্রধারীর হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন যুবদলের এক নেতা। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শহরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। আহত ওই যুবদল নেতার অভিযোগ, সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য–সংশ্লিষ্ট দুটি ইস্যুতে ফেসবুকে মন্তব্য করায় ও স্ট্যাটাস দেওয়ায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা করেন।

আহত ওই ব্যক্তি হলেন—মাগুরা জেলা যুবদলের সদস্য মো. মারুফ হোসেন (৪২)। তিনি আগামী সম্মেলনে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী। এর আগে মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

আহত ব্যক্তি ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ফটকের পাশে ওই যুবদল নেতার একটি দোকান আছে। সেখানে এক আইনজীবীর সঙ্গে কাজ শেষে সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে দোকান বন্ধ করে দুজন বের হচ্ছিলেন। এ সময় তাঁদের কাছে খবর আসে, পাশের গলিতে একদল অস্ত্রধারী যুবক অবস্থান নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা দুজন দ্রুত বের হতে গেলে অস্ত্রধারীরা তাঁদের ধাওয়া করেন। সফিক নামের ওই আইনজীবী কেশব মোড়ের দিকে পালিয়ে যান। কিন্তু যুবদল নেতা মারুফকে ধরে চাপাতি, রামদা ও ছ্যান দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান হামলাকারী ব্যক্তিরা। এরপর আহত যুবদল নেতাকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসক ও আহত ব্যক্তির স্বজনেরা বলেন, মারুফের মাথায় ও দুই হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। এর মধ্যে মাথার একটি কোপ গুরুতর। রাতেই তাঁকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলার বিষয়ে আজ সোমবার সকালে মুঠোফোনে যুবদল নেতা মারুফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ১৪ ডিসেম্বর স্থানীয় এমপি বিএনপির নেতা-কর্মীদের দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেটি নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছিল। ওই প্রতিবেদন আমাদের কোনো এক নেতা শেয়ার করেছিলেন, সেখানে আমি মন্তব্য করেছিলাম। এ ছাড়া এক দিন আগে আমার ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দিই। এই দুটি ঘটনার জেরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করেছেন। তবে আমি যা লিখেছি, তাতে নির্দিষ্ট কোনো এমপির নাম নেই, জেলার নামেরও উল্লেখ নেই।’

যুবদল নেতা মো. মারুফ হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

মাগুরা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে চাই, মাগুরার যাঁদের পল্টনের সমাবেশ বা পুরান ঢাকার সমাবেশে দেখা গেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নেব। এই মাগুরায় আমরা কোনো সন্ত্রাসী, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে এক ইঞ্চি জায়গা দেব না।’

আজ সকালে এক প্রশ্নের জবাবে যুবদল নেতা মারুফ হোসেন দাবি করেন, ‘আগেই আমাদের জানানো হয়েছিল, আটজনকে মারার জন্য নাকি তালিকা করা হয়েছে। তার মধ্যে আমি একজন। যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁদের সুনির্দিষ্ট পরিচয় এখনই বলতে পারছি না, তবে সবাই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের রাজনীতি করেন, এটা নিশ্চিত।’

অভিযোগের বিষয়ে মাগুরা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. ফজলুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন কেউ মার খেয়েছে, এটাই জানি না। আমরা গতকাল জেলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এসব কিছু আমাদের জানা নেই। যুবলীগের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না।’

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কারা হামলা করেছেন, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে চিনতে পারেননি। সুস্থ হলে কথা বলে বিষয়টা পরিষ্কার হওয়া যাবে। তবে আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করে বের করার চেষ্টা করছি, হামলায় কারা জড়িত।’