চিকিৎসার খরচ জোগাতে পারছে না অ্যাসিডদগ্ধ সুমাইয়া

সুমাইয়া ফেরদৌসী
ছবি: সংগৃহীত

২০২১ সালের ২ আগস্ট অ্যাসিড–সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন পটুয়াখালীর মোছা. সুমাইয়া ফেরদৌসী (১৯)। মাস তিনেক আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য সুমাইয়াকে নিয়ে তাঁর মা-বাবা গিয়েছিলেন ভারতের ভেলোরে। তবে এখন ভারতে সুমাইয়ার পাশে কেউ নেই। অর্থের অভাবে সুমাইয়ার মা-বাবা দেশে ফিরে এসেছেন। চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে সুমাইয়া এখন দিশাহারা। হাসপাতালের বিল বকেয়া থাকায় সুমাইয়া এখন ভেলোরের একটি ভাড়াবাড়িতে থাকছেন। ভেলোরে চিকিৎসা এবং থাকার খরচ না থাকায় নিরুপায় হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে সুমাইয়া সাহায্য চেয়েছেন।

অ্যাসিডদগ্ধ সুমাইয়ার বাড়ি পটুয়াখালীর সদর উপজেলার মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের গ্যারাখালী গ্রামে। তাঁর বাবার নাম রাজা মিয়া গাজী ও মা তাসলিমা বেগম। সুমাইয়া পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ২০২১ সালের ২ আগস্ট সুমাইয়া ও তাঁর ছোট ভাই মোহাম্মদ আলীকে (১২) অ্যাসিড দিয়ে ঝলসে দেয় দুর্বৃত্তরা। অ্যাসিডে সুমাইয়ার মুখ, বুক, হাত ও পায়ের বিভিন্ন স্থান পুড়ে যায়। সুমাইয়ার বাঁ চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুমাইয়ার ছোট ভাই মোহাম্মদ আলীর দুই হাতের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। ঘটনার পরদিন সুমাইয়া খালা রাবেয়া বেগম বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় সুমাইয়ার চাচাতো ভাই রাসেল গাজীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তবে কিছুদিন পরই রাসেল জামিনে মুক্তি পেয়েছে।

চিকিৎসার জন্য সুমাইয়া এখন একা ভারতের ভেলোরে অবস্থান করছেন। মুঠোফোনে সুমাইয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর চাচাতো ভাইদের সঙ্গে এলাকার লোকজনের বিরোধ ছিল। বিরোধীদের ফাঁসাতে তাঁর চাচাতো ভাইয়েরাই তাঁর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এর পর থেকে দগ্ধ শরীর নিয়ে অসহনীয় যন্ত্রণায় ভুগছিলেন তিনি। পরে এলাকার প্রভাবশালী লোকজনের চাপে তাঁর চিকিৎসার ব্যয় বহনের জন্য তাঁর চাচাতো ভাইয়েরা সাত লাখ টাকা দেন। তবে ওই টাকা থেকে পাসপোর্ট ও ভিসা করতেই তাঁর বাবা অনেক টাকা খরচ করেন। এ ছাড়া ওই টাকার একটি অংশ স্থানীয় লোকজনও ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে দাবি করেন সুমাইয়া।

প্রায় তিন মাস আগে মা-বাবার সঙ্গে সুমাইয়া ভারতে যান। এরপর ভেলোর সিএসসি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেখানে যাওয়ার তিন সপ্তাহ পরই টাকা সংগ্রহের কথা বলে তাঁর বাবা দেশে ফিরে আসেন। চার দিন আগে তাঁর মা তাসলিমা বেগমও তাঁকে হাসপাতালে ফেলে বাংলাদেশে চলে এসেছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুমাইয়া বলেন, এখন তিনি ভারতে একা পড়ে আছেন। তাঁর পাশে কেউ নেই। হাসপাতালে ৮০ হাজার রুপি বকেয়া। হাসপাতালসংলগ্ন একটি বাড়িতে আপাতত ভাড়া থাকছেন। তবে টাকাপয়সা না থাকায় তাঁর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে। ওষুধ কেনার মতো টাকাও নেই তাঁর কাছে। সারা শরীরের পোড়া যন্ত্রণা নিয়ে ছটফট করছেন। কিন্তু চিকিৎসা কীভাবে করবেন, কিংবা দেশে ফিরে আসবেন কীভাবে, সেসব বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।

সুমাইয়ার বাবা রাজা মিয়া বলেন, টাকা না থাকায় তিনি দেশে চলে এসেছেন। এখনো টাকা জোগাড় করতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া তাঁর ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। মেয়েকে একা ফেলে তাঁর স্ত্রী কেন চলে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, সুমাইয়ার ঘটনাটি খুবই অমানবিক। গতকাল দুপুরে সুমাইয়া হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে তাঁর সমস্যার কথাগুলো জানিয়েছেন। পুরো ভিডিওতে সুমাইয়া শুধু কান্না করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে সুমাইয়ার বাবার সঙ্গে কথা বলা হবে। বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুলিশ দেখছে বলে জানান তিনি।

পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, সুমাইয়া ও তাঁর ভাইয়ের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনার পরদিনই থানায় মামলা হয়েছিল। মূলত প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এ অমানবিক ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। দগ্ধ সুমাইয়া আসামিদের শনাক্ত করার পর পুলিশ সুমাইয়ার এক চাচাতো ভাইকে গ্রেপ্তার করেছিল। এ ছাড়া মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ একই বছরের ১৫ অক্টোবর রাসেল গাজী, তাঁর স্ত্রী মরিয়ম বেগম ও এনায়েত গাজীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে।