চট্টগ্রামে বন্যার পানিতে ভেসে নিখোঁজ দুজনের লাশ উদ্ধার, এক ব্যবসায়ী এখনো নিখোঁজ

লাশ
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে সাতকানিয়া পৌরসভার মির্জাখীলের বার্মা মার্কেট এলাকার পাশের বিল থেকে এক তরুণের লাশ এবং সকালে লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের চুনতিপাড়া এলাকা থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন সাতকানিয়ায় এক ব্যবসায়ী।

লাশ উদ্ধার হওয়া দুজন হলেন মোহাম্মদ তানভীর উদ্দিন (২০) ও আসহাব মিয়া (৬৫)। তানভীর উদ্দিন সাতকানিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাটিয়াপাড়া এলাকার মোহাম্মদ কামালের ছেলে। আর আসহাব মিয়া লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর আমিরাবাদ চট্টলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি পদুয়া বাজারের ব্যবসায়ী। এখনো নিখোঁজ অপর ব্যবসায়ীর নাম মোহাম্মদ ইদ্রিস (৬০)।

সাতকানিয়া পৌরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে মোহাম্মদ রনি নামের এক যুবককে সঙ্গে নিয়ে তানভীর উদ্দিন মির্জাখীলের বার্মা মার্কেট এলাকায় বন্যার পানি দেখতে যান। কোমরসমান পানি ভেঙে সড়কে হাঁটতে গিয়ে রনি ও তানভীর দুজনেই পানির স্রোতে ভেসে যান। রনি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ সামিয়ারপাড়া এলাকায় একটি গাছের সঙ্গে আটকে প্রাণে বেঁচে যান। তবে তানভীর বন্যার পানিতে ডুবে নিখোঁজ হন। পরে ২৬ ঘণ্টার পর তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

তানভীরের বাবা মোহাম্মদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজির পর বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থলের পাশের বিলে ছেলের লাশ ভেসে ওঠে। পরে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
সাতকানিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. এনামুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার ২৬ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলের পাশের বিলে তানভীরের লাশটি ভেসে উঠতে দেখেন স্বজনেরা। পরে লাশটি উদ্ধার করে তানভীরের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে সাতকানিয়া সরকারি কলেজ সড়কের সমিল এলাকা থেকে বন্যার পানিতে ভেসে যান ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিস। তিনি সাতকানিয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোয়াজরপাড়া এলাকার মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম নগরের রাহাত্তারপুল এলাকায় একটি মুদির দোকান করতেন।

নিখোঁজ মোহাম্মদ ইদ্রিসের মেয়ের স্বামী রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার শ্বশুর এলাকায় বন্যার পানি ওঠার খবর পেয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্রিজে রাখা মাছ-মাংস নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সেগুলো নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন। তবে সাতকানিয়া সরকারি কলেজ সড়ক থেকে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হয়েছেন।’

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে এক তরুণ ও এক ব্যবসায়ী নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরে বুধবার বিকেলে তরুণের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এক ব্যবসায়ী এখনো নিখোঁজ।

অপর দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে নিখোঁজ ব্যবসায়ী আসহাব মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজের ৩৬ ঘণ্টা পর বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের চুনতিপাড়া এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে সোমবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়েছিলেন।

পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনর-রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, পদুয়া বাজার থেকে আসহাব মিয়া বাড়ি দুই কিলোমিটার দূরে। দোকান বন্ধ করে তিনি ছেলেসহ উত্তর আমিরাবাদ-পদুয়া বাজার সড়ক ধরে বাড়িতে ফিরছিলেন। পানির প্রবল স্রোতে আসহাব মিয়া সড়ক থেকে পাশের খালে ভেসে যান। তবে তাঁর ছেলে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছান। বুধবার সকালে নিখোঁজ হওয়ার স্থান থেকে ৫০০ ফুট দূরে একটি পুকুরপাড়ের ঝোপে আটকে থাকা অবস্থায় তাঁর লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয় লোকজন।

লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, মারা যাওয়া ব্যবসায়ী আসহাব মিয়ার লাশ দাফনের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।