মেঘনায় অবৈধ বালু উত্তোলন: ইউএনওর জব্দ করা ড্রেজার ছিনিয়ে নিলেন বিএনপি কর্মীরা, দুজনের কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় অবৈধ বালু তোলায় ব্যবহৃত জব্দ করা একটি খননযন্ত্র (ড্রেজার) ছিনিয়ে নিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। আজ মঙ্গলবার সকালে সোনারামপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে ইউএনও রাফে মোহাম্মদ দুজনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন। এ সময় চারটি খননযন্ত্র ও পাঁচটি বাল্কহেড জব্দ করা হয়। কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার ছাগাইয়ার বাসিন্দা আহমদ আলী ও নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার আমজাদ হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, মেঘনা নদীর ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর বালুমহাল কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন ইজারা দিয়েছে। কিন্তু ভৈরবের লোকজন নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করে আশুগঞ্জের চর সোনারামপুর এলাকায় বালু উত্তোলন করেন। গতকাল সোমবার রাত থেকে তাঁরা চর সোনারামপুরে কাজ শুরু করেন। খবর পেয়ে আজ সকালে মেঘনা নদীর আশুগঞ্জের চর সোনারামপুর এলাকায় অভিযান চালান ইউএনও রাফে মোহাম্মদ।
এ সময় বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত পাঁচটি খননযন্ত্র (লোড ড্রেজার), পাঁচটি বাল্কহেড ও টাকার একটি ব্যাগ জব্দ করা হয়। অভিযান পরিচালনার সময় কয়েকটি স্পিডবোটে উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ভাই তারেক মিয়ার নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদুল হক, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, উপজেলা শ্রমিক দল সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন, উপজেলার ভৈরবপুর উত্তর পাড়ার ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি রাজু আহমেদ, একই ওয়ার্ডের কমিশনার পদপ্রার্থী জুম্মান মিয়া, উপজেলার ভৈরবপুর উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ছাত্রদলের নেতা নাহিদ মিয়া প্রমুখ ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা খননযন্ত্র ও বাল্কহেড জব্দ করায় ইউএনওর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং তেড়ে আসেন। একপর্যায়ে তাঁরা ইউএনওর সঙ্গে থাকা লোকজনকে মারধর করার চেষ্টা করেন এবং জব্দ করা একটি খননযন্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যান। বাকি চারটি খননযন্ত্র ও পাঁচটি বাল্কহেড জব্দ করা হয়। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পরিচালনা করে দুজনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ২০০১ থেকে বালু উত্তোলন করি। কিশোরগঞ্জ প্রশাসন বালুমহাল টেন্ডার দিয়ে দেয়। আমাদের দেওয়া এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কখনো সীমার কিছুটা বাইরে যেতে পারে। এ সীমানা দেখার দায়িত্ব কিশোরগঞ্জে ও ভৈরবের প্রশাসনের, আশুগঞ্জের নয়। আমরা মেঘনার ভৈরব অংশ থেকেই বালু উত্তোলন করছি। কিন্তু আশুগঞ্জের ইউএনও সকালে ভৈরব থেকে ড্রেজার ও বাল্কহেড জব্দসহ দুজনকে আটক করে জেল দিয়েছেন। আমার ছোট ভাই তারেকের সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেছে।’ তিনি ইউএনওর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগকে অপ্রমাণিত ও আপেক্ষিক বলে উল্লেখ করেন।
এ সম্পর্কে ইউএনও রাফে মোহাম্মদ বলেন, ‘মেঘনা নদীর ভৈরব প্রান্তে ইজারার নির্ধারিত সীমানার বাইরে এসে আশুগঞ্জের চর সোনারামপুর এলাকায় সোমবার গভীর রাত থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছিল। খবর পেয়ে আজ সকাল ছয়টার দিকে অভিযান চালাই। বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ভৈরবের তারেক মিয়ার নেতৃত্বে একটি দল স্পিডবোটে ঘটনাস্থল আশুগঞ্জে পৌঁছে আমাকে চার্জ করা শুরু করে। একপর্যায়ে তারা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। তারা জব্দ করা বালু উত্তোলনের টাকার ব্যাগ ও একটি ড্রেজার জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে আশুগঞ্জ থানায় নিয়মিত মামলা করা হবে।’