আজমতের ডাকা মূল্যায়ন সভায় যা বললেন নেতারা

নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান নেতা–কর্মীদের মূল্যায়ন সভা ডেকেছেন। সভায় উঠে এসেছে ভোটে হারের কারণ।

আজমত উল্লা খান
ফাইল ছবি

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলীয় প্রার্থীর জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের নিয়ে গঠন করা হয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এ কমিটির লোকজন পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান সেসব নেতাকে নিয়ে ‘মূল্যায়ন সভা’ ডেকেছেন।

মূল্যায়ন সভায় থাকছেন মহানগর আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা। কয়েকটি ধাপে হচ্ছে এ সভা। গতকাল বুধবার মহানগরের কাশিমপুর থানা ও কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভা হয়েছে।

সকাল সাড়ে ১০টায় কাশিমপুর থানা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে সভায় সভাপতিত্ব করেন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সঞ্চালনায় ছিলেন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান তুলা। এতে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা, আফজাল হোসেন সরকার প্রমুখ।

দুটি সভার কিছু ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভিডিও ফুটেজ ও মূল্যায়ন সভায় উপস্থিত থাকা কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাশিমপুরে সভায় সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেন নেতারা। এ সময় তাঁরা একে অন্যকে দোষারোপ করেন। দায়িত্বপালনের অবহেলার কথা উল্লেখ করেন। সভার শুরুতে একজন আরেকজনকে আক্রমণ করে কথা বলতে শুরু করেন। এতে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। পরে উপস্থিত নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

কাশিমপুর থানা আওয়ামী লীগের সদস্য মোশাররফ হোসেন কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে বলেন, ওইসব নেতা ভোটের আগের রাতে ঘড়ির জন্য টাকা বিতরণ করেন। ভোটের দিন গলায় নৌকা প্রতীক ঝুলিয়ে ঘড়ির জন্য ভোট চেয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান মোশাররফ।

বিকেলে কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মূল্যায়ন সভা শুরু হয়। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান। সভা সঞ্চালনা করেন কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান। সভায় মহানগর আওয়ামী লীগ, ওয়ার্ড ও বিভিন্ন ইউনিট কমিটি, নির্বাচনী কেন্দ্র কমিটি এবং দলের সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের নেতা সোলাইমান মিয়া বলেন, টেবিল ঘড়ি প্রতীকের কর্মীরা দৃশ্যপটে ছিলেন না, কিন্তু তাঁরা ছায়া কর্মী হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রত্যেক কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীর ব্যাচ লাগিয়ে, নৌকার ব্যাচ লাগিয়ে ঘড়ির জন্য ভোট চেয়েছেন। 

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সোলাইমান বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় আমরা তাদের (টেবিল ঘড়ির হয়ে কাজ করা আওয়ামী লীগের নেতারা) চিনি। আমাদের সামনেই সেই কাজগুলো করেছে। কিন্তু সমস্যা সেই সময় আমরা তাদের বলতে পারিনি। কারণ, তাদের গলায় ছিল নৌকার ব্যাচ। এ জন্য আমরা তাদের ধরতে পারিনি, কিন্তু তাদের চিনি। হৃদয়ের গহিনে ভালোবাসার স্থানে রক্তক্ষরণ করছে।’

দলের হয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করা নেতা–কর্মীদের শাস্তি দাবি করেছেন কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের কর্মী মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দলের এই মীর জাফরদের, এই ঘসেটি বেগমদের ছাঁটাই না করা হয়, তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের আবার হোঁচট খেতে হবে। সুতরাং এখনই উপযুক্ত সময়। তাদের চিহ্নিত করেন। আমরা জানি, তারা কারা। আমরা জানি, তারা রাতের অন্ধকারে সেই ঘড়ি মার্কার কাছ থেকে টাকা এনেছে। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব, তাদের খুব দ্রুত দল থেকে ছাঁটাই করুন।’

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘অনেকের অনেক অভিযোগ আছে, আমি জানি। সামনে এই অভিযোগ না বলাই ভালো। বক্তব্য কাগজে লিখে দিলে পরবর্তী সময়ে বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আজমত উল্লা আরও বলেন, ‘আপনাদের সবাইকে একসঙ্গেই চলতে হবে। তাই সামনাসামনি হয়তো অনেক কিছু বলতে পারবেন না। তাই আমরা চাই মাঠের প্রকৃত চিত্রটা আমাদের হাতে আসুক। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই লোকগুলোকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। যেন তারা জাতীয় নির্বাচনে ক্ষতি করতে না পারে।’

মূল্যায়ন সভা চলবে ৮ জুন পর্যন্ত। ৩ জুন সকাল ১০টায় কাউলতিয়া থানা, গাজীপুর সদর থানা, ৬ জুন টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানা ৮ জুন টঙ্গীর মুদাফা এলাকার ইন সিগনা রিসোর্টে সভা হবে। সেই সভায় উপস্থিত থাকবেন গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।