রিমালে উড়ে গেছে টিনের চালা, শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে গাছতলায়

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বৈকরঝুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠের গাছতলায় ক্লাস করছে
ছবি: প্রথম আলো

বিদ্যালয় চত্বরের গাছতলায় বেঞ্চ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। খোলা জায়গায় ক্লাস হওয়ায় মনোযোগ নেই তাদের। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ কাগজ দিয়ে নিজেকে বাতাস করছে।

এ চিত্র সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার ১০ নম্বর বৈকরঝুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিদ্যালয়ের আধা পাকা ভবনের টিনের ছাউনি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কক্ষসংকটে পড়েছে কর্তৃপক্ষ। ক্লাস চালু রাখতে স্কুলের মাঠের গাছতলায় ক্লাস নিতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বৈকরঝুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শোভনালী ইউনিয়নে বৈকরঝুটি গ্রামে অবস্থিত। প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এ বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ৩১১ জন। দীর্ঘদিন ধরে শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে এ বিদ্যালয়ে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাকিলা খানম জানান, বিদ্যালয়ে একতলা দুটি ভবন আর একটি আধা পাকা টিনের ছাউনি দেওয়া কক্ষ আছে। একতলা ভবনটি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে অনেক আগে। ওই ভবনের একটি কক্ষ অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অপরটি কক্ষটি ব্যবহার করা হয় না। টিনের ছাউনির কক্ষসহ তিনটি কক্ষে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নেওয়া হতো। কিন্তু ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে টিনের ছাউনি নষ্ট হয়ে যায়। তার পর থেকে তৃতীয় শ্রেণির ৬১ জন ছাত্রছাত্রী ক্লাস নেওয়া হচ্ছে গাছতলায়। তবে ছাত্রছাত্রী কম উপস্থিত হলে বারান্দায় বসিয়ে ক্লাস নেওয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয় চত্বরের গাছতলায় তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। তাদের পড়াচ্ছিলেন সহকারী শিক্ষক তাসলিমা খাতুন। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের ছাউনির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার যাওয়ায় ভবনটি বর্তমান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আবার রোদ সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পড়ে। তখন অনেক গরম হয়ে যায় কক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে স্কুলমাঠের গাছতলায় ক্লাস নিতে হচ্ছে। এখানেও গরম, তবে একটি কম।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বৈকরঝুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আধা পাকা ভবনের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে
ছবি: প্রথম আলো

প্রধান শিক্ষক সাকিলা আনম বলেন, স্কুলের পুরোনো ভবনটি নিলামে বিক্রির পর ২০২০ সালে মাটি পরীক্ষা করা হয়। তখন একটি নতুন ভবন অনুমোদন হয়েছিল। কিন্তু পরে কী কারণে নতুন ভবনটি হয়নি, তা তিনি জানেন না। এ অবস্থায় বর্ষা মৌসুমে ক্লাস করা দুরূহ হয়ে পড়বে। উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন বর্ম জানান, বিদ্যালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি দ্রুত সংস্কারের জন্য বিস্তারিত জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসেমি ইয়াসমিন কারেমী বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে একটি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও ৬৭টি বিদ্যালয় কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৮৭ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এসব বিদ্যালয় দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

আর নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, বৈকরঝুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের ব্যাপারে তাঁর কিছু জানা নেই।