শিক্ষকতার পাশাপাশি হান্নানের পেঁপে চাষ, এবার ৮ লাখ টাকা বিক্রির আশা

নিজের পেঁপে খেতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের আবদুল হান্নানছবি: প্রথম আলো

গাছের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ঝুলে আছে বিভিন্ন আকারের কাঁচা–পাকা পেঁপে। খেতজুড়ে পেঁপে আর পেঁপে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের একটি খেতের চিত্র এটি। এটার মালিক আবদুল হান্নান (৪৫)। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রায় দুই বিঘা জমিতে ‘মানিকগঞ্জের শাহি জাত’–এর পেঁপে চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন।

আবদুল হান্নানের ভাষ্য, চারা রোপণ ও পরিচর্যা বাবদ দুই বিঘা জমিতে তাঁর খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। গত তিন মাসে তিনি ৩৫০ মণ পেঁপে পাইকারি দামে বিক্রি করেছেন। প্রতি কেজি পেঁপে ২৮ থেকে ৫০ টাকা দরে প্রায় তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী দুই মাসে আরও ২৫০ মণ পেঁপে পাবেন বলে ধারণা করছেন। সেগুলো বিক্রি করে প্রায় দুই লাখ টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এই শিক্ষক পেঁপে চাষের পাশাপাশি পেঁপের বীজও উৎপাদন করছেন। প্রতি কেজি বীজ ১৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন। এ বছর এখন পর্যন্ত ৭ কেজি বীজ বিক্রি করেছেন। আরও ১৫ থেকে ২০ কেজি বীজ বিক্রির প্রত্যাশা তাঁর। পেঁপের বীজ বিক্রি করে প্রায় তিন লাখ টাকা পাবেন। পেঁপে ও পেঁপের বীজ বিক্রি করে সব মিলিয়ে প্রায় ৮ লাখ টাকা পাবেন তিনি। খরচ বাদ দিলে প্রায় পুরোটাই তাঁর লাভ থাকে।

আলাপে আলাপে আবদুল হান্নান জানালেন, তিনি তেবাড়িয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। প্রায় তিন বছর আগে ইউটিউব দেখে আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ হন। প্রথম বছর মাত্র ১০০টি গাছ দিয়ে তিনি পেঁপে চাষ শুরু করেন। সে বছর অল্প খরচ ও সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় তাঁর আগ্রহ বাড়ে। চলতি বছর প্রায় দুই বিঘা জমিতে ৮০০টি ‘মানিকগঞ্জের শাহি জাত’–এর পেঁপের চারা রোপণ করেছেন। রোপণের দুই মাসের মাথায় গাছে ফুল ধরতে শুরু করে এবং তিন মাসের মাথায় পেঁপে বিক্রি শুরু করেন তিনি।

পেঁপে চাষে আবদুল হান্নানের সফলতার গল্প ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকায়। প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে আগ্রহীরা তাঁর এখানে আসেন। এমন একজন উপজেলার আলাউদ্দিন নগর এলাকার বেসরকারি চাকরজীবী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আগামী বছর তিনি ৫০০ বীজ নিয়ে নিজে পেঁপে চাষ করবেন।

আবদুল হান্নান গত তিন মাসে ৩৫০ মণ পেঁপে পাইকারি দামে বিক্রি করেছেন। আগামী দুই মাসে আরও ২৫০ মণ পেঁপে বিক্রির আশা তাঁর
ছবি: প্রথম আলো

দরবেশপুর গ্রামের কৃষক আবেদ মণ্ডলও ৭ শতাংশ জমিতে পেঁপের চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তিনি আবদুল হান্নানের কাছে বীজের অর্ডার দিয়েছেন।

কয়েক বছর আগেও বাসাবাড়ি কিংবা জমির আলে সীমিত পরিসরে পেঁপের চাষ হতো। তবে অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। চলতি বছর কুমারখালীর প্রায় ১২০ বিঘা জমিতে অন্তত তিন কোটি টাকার পেঁপে চাষ হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম।

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, আধুনিক কৃষি ও কৃষকদের ভাগ্য বদলে প্রণোদনা প্রদানসহ নানা উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে সরকার। মাঠপর্যায়ে প্রশাসন সেগুলো বাস্তবায়ন করছে।