রংতুলির আঁচড়ে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার দাবি
সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কার্যালয়ের দোতলায় সারি বেঁধে বসে শিশু, কিশোর, কিশোরীরা। তারা সাদা কাগজে রঙের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলছে সুন্দরবন ও তার প্রাণবৈচিত্র্য। আজ বুধবার বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের আয়োজনে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার চিত্র এটি। ‘বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’ প্রতিপাদ্যে এ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সুন্দরবন ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার দাবি তুলে ধরেন আয়োজকেরা।
দুপুর ১২টার দিকে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন প্রাঙ্গণে দেখা যায়, দোতলার মেঝেতে পাতা সারি সারি ম্যাট। শতাধিক শিশু-কিশোর-কিশোরী তার ওপর বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে ছবি আঁকছে। তারা সবাই খুলনার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সবাই রংতুলির আঁচড়ে সুন্দরবনের গাছ, নদী, পাখি, বানর, বাঘ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছে।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সিয়াম হোসেন (৮) আঁকছিল সুন্দরবনের হরিণের ছবি। পাশেই আরেক শিশু আহসান হাবিবও (৯) আঁকছিল হরিণ। কয়রার প্রতাপ স্মরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম খাতুন আঁকছিল বনের নদীপাড়ের দৃশ্য। নদীর তীরে চরে বেড়াচ্ছে হরিণের পাল, পাশেই মাছ ধরছেন জেলে। নদীর অপর পাড়ে ঘন গাছপালার মধ্যে বসে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। নির্ধারিত সময়ের আগেই ছবি আঁকা শেষ করে মরিয়ম জানাল, এখানে এসে ছবি আঁকতে তার খুবই ভালো লেগেছে। জেলেরা যাতে বনের হরিণের ক্ষতি না করে, ছবিতে সেটা বোঝাতে চেয়েছে সে।
অনুষ্ঠানে সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক শরিফুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা সাদিকুজ্জামান, ফরেস্ট কর্মকর্তা আল আমিন, বনরক্ষী আবদুর আনিসুজ্জামান প্রমুখ। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ১০ জন বিজয়ী নির্বাচন করে তাদের হাতে সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন অতিথি ও বিচারকেরা।
প্রতিযোগিতার বিচারক কয়রার প্রতাপ স্মরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রণজিৎ কুমার বলেন, শিশুরা নিজের মতো করে ছবি আঁকবে, সৃষ্টি করবে, মনের মাধুরী মিশিয়ে রং করবে, এতেই তাদের সৃজনশীলতা বাড়বে। সুন্দরবনবিষয়ক ছবি আঁকার এ ধরনের আয়োজন শিশুদের সুন্দরবনের নদ-নদী ও জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা দেয়, বন সুরক্ষার বিষয়টি ভাবতে শেখায়।
সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আজ সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার শিশুদের সুন্দরবন বিষয়ে ধারণা দিতে এবং তাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে এসেছি। ছবি আঁকা আমাদের শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতিরই অংশ। এই আয়োজনের মাধ্যমে সুন্দরবন সুরক্ষার বিষয়টি শিশুরা মনের মধ্যে ধারণ করতে পারবে। অপরাধমুক্ত সুন্দরবনের পাশে সুন্দর পরিবেশে বড় হোক নতুন প্রজন্ম। এই প্রজন্মের সঙ্গী হতে চাই আমরা।’