শিশু আয়ানের পর চলে গেলেন মা রুক্সিও, একে একে মারা গেলেন পরিবারের চারজন

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট
ফাইল ছবি

রাজধানী বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বিস্ফোরণে দগ্ধ শিশু আয়ানের (৩) পর এবার মারা গেলেন তাঁর মা রুক্সি আক্তার (২২)। আজ রোববার ভোরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

আগের দিন শনিবার বেলা দুইটার দিকে মারা যান শিশু আয়ানের নানা আবদুল মান্নান (৫৫)। তার আগে বুধবার ভোর চারটার দিকে দগ্ধ শিশু আয়ান ও বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে শিশু আয়ানের খালা ফুতু আক্তারের (২০) মৃত্যু হয়। ফলে ওই ঘটনায় আয়ানসহ একে একে একই পরিবারের চারজন মারা গেলেন।

আরও পড়ুন

গত সোমবার সন্ধ্যায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এ ব্লকে সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন বাসার নিচের একটি কক্ষে এসি বিস্ফোরণে ওই চারজন দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে প্রথমে এভারকেয়ার হাসপাতালে এবং পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তবে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন ওই পরিবারের আরেক সদস্য আহমদ মোস্তফা নামের এক যুবক।

আবদুল মান্নানের ছোট ভাই জাহেদুল ইসলাম বলেন, আজ ভোর পাঁচটার দিকে তাঁর ভাতিজি রুক্সি আক্তার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শনিবার দুপুরে একই হাসপাতালে মারা যান তাঁর বড় ভাই আবদুল মান্নান। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দুটি কক্সবাজারের মহেশখালীর বাড়িতে আনা হবে।

আরও পড়ুন

আয়ানের মা রক্সি আক্তার কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাঁর চিকিৎসা করাতেই তাঁরা ঢাকায় যান। রক্সির স্বামী সিরাজুল মোস্তফা দুবাইপ্রবাসী।

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষ করে গত শুক্রবার রাত তিনটার দিকে ঢাকা থেকে শিশু আয়ান ও তাঁর খালা ফুতু আক্তারের লাশ বাড়িতে আনা হয়। পরদিন শনিবার সকাল ১০টায় তৈয়বিয়া মাদ্রাসার মাঠে জানাজা শেষে তাঁদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

স্থানীয় মাতারবাড়ী ইউপির সদস্য সরওয়ার কামাল বলেন, ‘ঢাকায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে এসি বিস্ফোরণে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া বিরাজ করছে। এখন ওই পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’

আরও পড়ুন

নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রুক্সি আক্তারের মাথায় ব্রেইন টিউমারের অস্ত্রোপচার করাতে গত ১ জুন তিনি ও তাঁর বাবা, বোন ও শিশুসন্তান আয়ানসহ একই পরিবারের পাঁচজন ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতালের পাশে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এ ব্লকে সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন বাসায় নিচের একটি কক্ষে ওঠেন। দিনে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে ওই কক্ষ ভাড়া নেওয়ার পর পাশে এভারকেয়ার হাসপাতালে রুক্সি আক্তারের চিকিৎসা চলছিল। ৬ জুন এভারকেয়ার হাসপাতালে রুক্সি আক্তারের ব্রেইন টিউমারের অস্ত্রোপচার করানো হয়। অস্ত্রোপচারের পর ওই ভাড়া নেওয়া কক্ষে থেকে নিয়মিত চিকিৎসক দেখিয়ে আসছিলেন রুক্সি আক্তার। কিন্তু গত সোমবার সন্ধ্যায় হঠাৎ ওই কক্ষের বিদ্যুৎ চলে যায়। পরে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার বিষয়ে বাসার কেয়ারটেকারের কাছ থেকে খোঁজ নিতে ওই কক্ষ থেকে বের হন আহমদ মোস্তফা। আহমদ মোস্তফা ওই কক্ষ থেকে বের হওয়ার ৩০ সেকেন্ডের মাথায় এসি বিস্ফোরিত হয়ে আগুনে দগ্ধ হয় শিশু আয়ানসহ পরিবারটির ৪ জন।

আরও পড়ুন