যমুনার বুকে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর ছয়টি স্প্যান দৃশ্যমান

নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর ৬টি স্প্যান বসানো হয়েছে। রোববার দুপুরে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে
ছবি: প্রথম আলো

যমুনা নদীর বুকে নির্মিত হচ্ছে রেলসেতু। বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মাণাধীন সেতুটির নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু। আজ রোববার সকালে সেতুটির ৬টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এতে ৪৯টি স্প্যানের মধ্যে ৬টি স্প্যান এখন দৃশ্যমান। পর্যায়ক্রমে বাকি স্প্যানগুলো খুঁটির ওপর বসানো হবে।

সেতুটি নির্মিত হলে দেশের আমদানি-রপ্তানি খরচ কমে যাওয়াসহ বঙ্গবন্ধু সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ অনেকটাই কমবে; সেই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে দেশের উত্তরের জনপদ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী (সুপার স্ট্রাকচার) আবদুল খালেক বলেন, ইতিমধ্যে সেতুর পূর্ব পাশের ১২টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর ৪২-৪৩, ৪৭-৪৮, ৪৮-৪৯ ও ৪৯-৫০ এবং ৪৩-৪৪ ও ৪৪-৪৫ নম্বর পিলারে স্প্যান বসানোর কাজ শেষ। খুব দ্রুত সেতু নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে।

সেতুটির প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ও জাপানের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলসেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সেতুটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪৯টি স্প্যানে তৈরি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতু। সেতুতে ৫০টি খুঁটির (পিলার) মধ্যে সেতুর পূর্ব পাশে ইতিমধ্যে ১২টি খুঁটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি খুঁটিগুলোর কাজ চলমান। ৫০টি খুঁটির ওপর ৪৯টি স্প্যান বসানো হবে। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুঁটিগুলোর ওপর স্প্যান বসানোর কাজ করছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা।

ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা বিশেষ ধরনের স্টিল দিয়ে তৈরি হচ্ছে স্প্যানগুলো। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত সেতুটি নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, নতুন স্টিল ব্যবহারের কারণে স্প্যানগুলো আলাদাভাবে রং করার প্রয়োজন হবে না। বলা হচ্ছে, এর ফলে ১০০ বছরেরও সেতুর কাঠামোয় মরিচা ধরবে না। সেতুতে স্লিপার ছাড়াও বিশেষ পদ্ধতিতে বসানো হবে রেলট্র্যাক। এতে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলবে পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রেন। ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

সেতুটির প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জাপানের দুটি প্রতিষ্ঠান সেতুটির নির্মাণকাজ করছে। ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু। ইতিমধ্যে সেতুর ৪৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণ করা হলে মালবাহীসহ ৬৮টি ট্রেন চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তসংযোগ সৃষ্টি হবে। এতে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। মালামাল পরিবহনে সময় ও খরচ কম হবে।

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি অবু ইসুফ প্রথম আলোকে বলেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের সঙ্গে দেশেও বর্তমানে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে। এ কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ হলে ব্যবসায়ীরা বিশেষ লাভবান হবেন। পরিবহন খরচ অনেকাংশেই কমে যাবে। আমদানি-রপ্তানি খরচ কমে যাবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে দেশের উত্তরের জনপদ।