ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ, কফিন মিছিল
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরে বিক্ষোভ মিছিল, কফিন মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আজ শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এসব কর্মসূচি পালন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জুলাই ঐক্য, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এসব কর্মসূচি থেকে বক্তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ এবং শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। বক্তারা বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী সাহসী কণ্ঠস্বর শরিফ ওসমান হাদিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। খুনিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শরিফ ওসমান হাদি মারা যান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী বক্তব্যের কারণে শরিফ ওসমান হাদি সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ছিলেন।
এনসিপির সড়ক অবরোধ
হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে বেলা তিনটার দিকে নগরের বড়পোল এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীরা। এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব সাগুফতা বুশরার নেতৃত্বে তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন। এতে বড়পোল থেকে বন্দরমুখী পোর্ট কানেক্টিং সড়ক ও আগ্রাবাদ এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।
আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল। নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) নিষ্কৃতি চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীবাহী যান চলাচল করতে দিচ্ছেন তাঁরা। তবে পণ্যবাহী সব যানবাহন আটকে দিচ্ছেন। ফলে ওই এলাকাসহ আশপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ওসমান হাদিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। জাতীয় ছাত্রশক্তির চট্টগ্রাম নগরের সংগঠক ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দাবি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, ওসমান হাদির হত্যাকারীদের শাস্তি এবং ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে দেশে এনে তাঁর বিচার করতে হবে।’
কফিন ও বিক্ষোভ মিছিল
ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে আজ দুপুরে কফিন মিছিল করেছে জুলাই ঐক্যের চট্টগ্রাম শাখা। জুমার নামাজ শেষে নগরের আন্দরকিল্লা শাহি মসজিদ এলাকা থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জামালখান মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা একটি প্রতীকী কফিন জাতীয় পতাকা মুড়িয়ে সেটি নিয়ে মিছিল করেন।
জামালখান মোড়ে সমাবেশে জুলাই ঐক্য চট্টগ্রামের প্রধান সংগঠক আবরার হাসান রিয়াদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা ইবনে হোসাইন জিয়াদসহ অন্য নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন।
শিবিরের বিক্ষোভ
ওসমান হাদিকে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে নগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম নগরের দুই কমিটি। চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণের নেতা-কর্মীরা আজ জুমার নামাজের পর নগরের জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন।
নগর উত্তর শিবিরের সেক্রেটারি মুমিনুল হকের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে দেন বক্তব্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি মুহাম্মদ আলী ও নগর দক্ষিণ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইমুনুল ইসলাম মামুন। এ সময় তাঁরা শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নিলেও তার আধিপত্য এখনো বহাল রয়েছে। গুলি করে কেবল ওসমান হাদিকে নয়, যেন জুলাইকেই হত্যা করা হয়েছে।