ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর খাল উদ্ধারে ৪০ দোকান ও বসতঘর উচ্ছেদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহর খাল উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান। সোমবার শহর খাল–সংলগ্ন পৌর হকার্স মার্কেট এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী শহর খাল উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে ১৮টি অবৈধ দোকানসহ অন্তত ৩৫ থেকে ৪০টি বসতঘর উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন।

আজ সোমবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত শহর খালসংলগ্ন পৌর হকার্স মার্কেট ও কান্দিপাড়া এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।

আরও পড়ুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, তিতাস নদের সঙ্গে সংযুক্ত শহর খালটি জেলার টানবাজার ও কান্দিপাড়া এলাকা দিয়ে গোকর্ণঘাট হয়ে আবার তিতাসে মিলিত হয়েছে। খালটির দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। যদিও জেলা পরিষদের খতিয়ান অনুযায়ী খালের আয়তন ৮ দশমিক ৩৫ একর। খালটি জেলা পরিষদের আওতায় থাকলেও তাদের কাছে এর গভীরতা ও প্রশস্ততার কোনো হিসাব নেই। ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সৌন্দর্যবর্ধনের নামে কান্দিপাড়া এলাকা থেকে ঘোড়াপট্টির সেতু (ফকিরাপুল) পর্যন্ত খালের দুই পাড়ে সিসি ব্লক, ফুটপাত ও রেলিং স্থাপন করে পৌর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরপর কেউই খালটির রক্ষণাবেক্ষণ করেনি।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পৌর হকার্স মার্কেটসংলগ্ন শহর খালের জায়গায় অবৈধভাবে ১৩টি দোকান বানান শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও তাঁর স্বজনেরা। অন্যদিকে কান্দিপাড়া পূর্ব মহল্লা (মাইমলহাটি) থেকে ঘোড়াপট্টি সেতু পর্যন্ত খালপাড়ের দক্ষিণ দিকে সিসি ব্লক ও ফুটপাতের জায়গায় সীমানা বাড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা পাকা ও আধা পাকা বিভিন্ন স্থাপনা বানান। কয়েক মাস আগে জেলা প্রশাসক মো. শাহ্গীর আলমের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও জেলা পরিষদ খালের দুই পাড়ের অংশ মেপে খালের সীমানা নির্ধারণ করেন। তখন কান্দিপাড়া দক্ষিণ পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িঘরে লাল দাগ দিয়ে খালের সীমানা চিহ্নিত করা হয়। সম্প্রতি দুই পাড়ে খালের জায়গায় থাকা দোকান ও বসতঘর নিজ দায়িত্বে অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসন মাইকিং করে।

আজ সকাল থেকে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও পৌরসভার কর্মীদের নিয়ে পৌর হকার্স মার্কেটসংলগ্ন খালের জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় প্রশাসন। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ও তাঁর স্বজনদের বানানো ১৩টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়। একই সময় তিতাস নদসংলগ্ন কান্দিপাড়া পূর্ব মহল্লা থেকে সড়ক বাজার পর্যন্ত দক্ষিণ পাড়ের ২০ থেকে ২৫টি বসতঘরের সামনের অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশ্রাফ আহমেদ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফ-উল-আরেফীন, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার প্রশান্ত বৈদ্য উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এটি জেলার সবচেয়ে বড় অভিযান। অন্য কোনো জেলা প্রশাসক এমন অভিযানের সাহস করতে পারেননি।

জেলা প্রশাসনের অভিযানে ১৮টি অবৈধ দোকানসহ অন্তত ৩৫ থেকে ৪০টি বসতঘরের সামনের অংশ উচ্ছেদ করা হয়। সোমবার শহর খাল–সংলগ্ন পৌর হকার্স মার্কেট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

খালের দক্ষিণ পাড়ের বাসিন্দা শামীম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খালের জায়গা দখল করিনি। এ জন্য আমরা খালপাড়ের আট বাসিন্দা উচ্ছেদ অভিযানে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতে মামলা করেছি। আদালত গতকাল রোববার থেকে সাত কর্মদিবসের জন্য অভিযানের ব্যাপারে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার পুনরায় খালের সীমানা নির্ধারণে কমিশন পাঠাবেন আদালত।’

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার প্রশান্ত বৈদ্য প্রথম আলোকে বলেন, যদি আদালত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন, তাহলে জেলা প্রশাসন তার উত্তর দেবে। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে আবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

আরও পড়ুন

সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফ-উল-আরেফীন প্রথম আলোকে বলেন, হকার্স মার্কেট এলাকায় খালের জায়গায় অবৈধভাবে বানানো দোকানগুলো পুরোপুরি উচ্ছেদ করা হয়েছে। খালের দুই পাড়ের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা যতটুকু খালের জায়গা দখল করেছেন, ততটুকু জায়গা থেকে দোকান ও বসতবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০টি দোকান ও বসতঘর ভাঙা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশ্রাফ আহমেদ বলেন, খালের শুরু কান্দিপাড়া ও টানবাজার থেকে শেষ অংশ গোকর্ণঘাট পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালাবে জেলা প্রশাসন।