তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগাতে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার ঘোষণা করেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত।
আজ রোববার দুপুরে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে আপনাদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর আদর্শের দিকে তাকান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব এবং তাঁর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নের দিকে তাকান, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদ, অকুতভয় মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। আজ দেশ ও জাতি আপনাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। আপনাদের মেধা, শ্রম ও গবেষণার দ্বারাই এই জাতির যাবতীয় সংকটের অবসান ঘটবে। আপনারা দেশ ও জাতির সামনে আশার আলোস্বরূপ। আপনাদের কর্মস্পৃহা এই দেশকে সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে দক্ষ মানবসম্পদে ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আমাদের মতো দেশে যাঁদের প্রাকৃতিক সম্পদ খুব সীমিত, সেখানে দক্ষ মানবসম্পদ বেশি গুরত্বপূর্ণ। আপনাদের মতো তরুণরাই আমাদের দেশের বিরাট শক্তি ও প্রকৃত সম্পদ। এই তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগাতে বর্তমান সরকারও নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এই বাস্তবতায় আপনাদের নিজেদেরও দক্ষ করে তুলতে হবে।’
খাদ্য নিরাপত্তার প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ, অবরোধ-পাল্টা অবরোধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী ‘খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা’ বেড়েছে। বেড়েছে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে এবং বহুমুখী দুর্যোগের মধ্যেও বিশ্বে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তব্য দেন পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র বা সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজডের (সিআরপি) পরিকল্পক ও প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর। অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরহাদ হোসেন, সহ–উপাচার্য এআরএম সোলাইমান, রেজিস্ট্রার তৌহিদুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম, ছানোয়ার হোসেন ও খন্দকার মমতা হেনা, পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জনগণের প্রতি আপনাদের কৃতজ্ঞ হতে হবে
সমাবর্তনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ভ্যালেরি অ্যান টেইলর বলেন, ‘আপনারা ডিগ্রি গ্রহণ করে জীবনের পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যেতে চলেছেন। আপনাদের শিক্ষার জন্য আপনাদের পেছনে রাষ্ট্রের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে। এই অর্থ এসেছে এ দেশের কৃষকের কাছ থেকে, শ্রমিকের কাছ থেকে, মেহনতি মানুষের কাছ থেকে। তাই রাষ্ট্রের জনগণের প্রতি আপনাদের কৃতজ্ঞ হতে হবে। তাদের প্রতি আপনাদের বিশাল দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
ভ্যালেরি অ্যান টেইলর বলেন, শুরুতে জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করা হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল জ্ঞানশক্তির বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে জীবিকা, সম্পদ ও মানবসেবাও করা যায়। এভাবে শিল্প, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বিকাশ ঘটে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভাবে মানুষের ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। প্রযুক্তি জ্ঞানের ব্যবহারিক দিক এবং এটি বিজ্ঞানের অনুশীলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। পশ্চিমে আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতি মূলত বাস্তব পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে। অনেক মহান বিজ্ঞানী, দার্শনিক এবং পণ্ডিত এই অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের উদ্দেশে ভ্যালেরি অ্যান টেইলর বলেন, ‘আমাদের সাধারণ ধারণা হলো সমাবর্তন শুধু স্নাতকদের জন্য, তবে এটি সম্পূর্ণ সত্য নাও হতে পারে। সমাবর্তন যতটা ছাত্রছাত্রীদের জন্য ততটা তাঁদের অভিভাবকদের জন্য। আমি অভিভাবকদের অভিনন্দন ও স্বীকৃতি জানাই।’