গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে চান না
‘২০১৩ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা দুই ভাই ব্যবসা দেখাশোনা করি। ভাইটাও চলে গেল, আমি একা হয়ে গেলাম। কার কাছে বিচার চাইব? কার বিরুদ্ধে মামলা করব? আমি তো জানি না কোন পুলিশ বা আর্মি গুলি করেছে। আমি যদি জানতাম কে আমার ভাইকে মেরেছে, তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতাম। ভাইকে হারিয়ে আমি এখন একা হয়ে গেলাম। তাই এখন আর শোকের মাঝে মামলার ঝামেলায় যেতে চাই না।’
গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের নিজ বাসায় কথাগুলো বলছিলেন দীপ্ত সাহার ভাই সঞ্জয় সাহা (শুভ)। গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হন দীপ্ত। শুধু দীপ্তর পরিবার নয়, ওই ঘটনায় নিহত অন্য পরিবারের সদস্যরাও মামলা করতে চাচ্ছেন না।
গত বুধবারের ওই ঘটনায় পাঁচজন নিহত হন। নিহত অন্যরা হলেন গোপালগঞ্জের থানাপাড়া এলাকার রমজান মুন্সী (৩৫), সদরের ভেড়ার বাজার এলাকার ব্যাপারীপাড়ার ইমন তালুকদার (১৮), টুঙ্গিপাড়ার সোহেল মোল্লা (৩৫) ও সদরের বিসিক এলাকার রমজান কাজী (১৮)। শনিবার নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের সঙ্গে। তাঁরা মামলার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেন।
নিহত রমজান কাজীর বাবা অসুস্থ, হাঁটাচলা করতে পারেন না। রমজান বড় হয়েছেন মামা কলিম মুন্সীর কাছে। আজ শনিবার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা নিয়ে আমরা এখন পর্যন্ত কিছু ভাবিনি। কী হবে মামলা করে? আমার ভাগনের লাশ নিয়ে থানায় গেলাম, ঢুকতে পারলাম না। দ্বিতীয়বার হাসপাতালে নিয়ে গেলে ময়নাতদন্ত করার জন্য সেখানে দাঁড়াইতেও দিল না। এখন কার কাছে বিচার চাইব? আমাদের বিচার একমাত্র আল্লাহর কাছে চাইব।’
নিহত সোহেল মোল্লা ছিলেন বাবা–মায়ের একমাত্র সন্তান। সন্তানের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তাঁরা। সোহেল মোল্লার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর মামা জাহিদুল ইসলাম তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বোনের একমাত্র সন্তান ছিল সোহেল। দুলাভাই বৃদ্ধ মানুষ, চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। তা ছাড়া কার বিরুদ্ধে মামলা করবে? আমরা কি দেখেছি কার গুলিতে মারা গেল? তা ছাড়া আমার ভাগনের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। তাই দুলাভাই বলছেন, মামলায় ঝামেলার মধ্যে যাবেন না।’
মামলা প্রসঙ্গে নিহত রমজান মুন্সীর বড় ভাই জামাল মুন্সী বলেন, ‘মামলা করে কি আমার ভাইকে ফিরে পাব? মামলা করলে কি বিচার পাব? কেউ আমাকে বিচারের নিশ্চয়তা দেবে, মামলা করলে বিচার পাব? তাই আমরা মামলা করতে চাই না।’
কেন মামলা করছেন না, এমন প্রশ্নে নিহত ইমনের মামাতো ভাই রানা ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার ফুফা মানসিকভাবে অসুস্থ। ফুফু শোকে পাথর। তাঁদের সংসার চালাতেই কষ্ট হয়, মামলা চালানোর খরচ পাবেন কোথায়? তাই মামলা করতে চান না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুল রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত নিহতের পরিবারের কোনো সদস্য থানায় মামলা করতে আসেননি। তাঁরা না এলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।