জনবসতি না থাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পটি অপরাধীদের ‘আড্ডাখানা’

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫১০টি ঘরে কেউ থাকেন না
ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের পানসারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫১০টি ঘরে কোনো বাসিন্দা থাকে না। আশপাশে জনবসতি না থাকায় সেটা অপরাধীদের আড্ডাখানা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মুন্সি।

ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মুন্সি প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পটি করা হয়েছে চরের মাঝে ফসলি জমিতে। চারদিক দিয়ে খাল, বিল ও ফসলি জমি। আশপাশে কোনো জনবসতি নেই। এ কারণে মাদকসেবী ও জুয়াড়িরা সেখানে আড্ডা বসান। ওই এলাকার এক দিকে মুন্সিগঞ্জের চর, আরেক দিকে চাঁদপুরের চর, আরেক দিকে ভেদরগঞ্জ উপজেলার চর। এই এলাকায় মানুষ যেতে চায় না। এমন একটি জায়গায় এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার আগে সঠিকভাবে স্থান নির্ধারণ করার প্রয়োজন ছিল।

পদ্মা নদীর দুর্গম চরে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২–এর ৫৪০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৫১০টিতে কোনো বাসিন্দা থাকে না। দুই বছর আগে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ হলেও কোনো বাসিন্দাকে বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। ব্যবহৃত না হওয়ায় ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নষ্ট হচ্ছে।

শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে নড়িয়ার পদ্মা নদীর তীরের বাঁশতলা ঘাট। সেখান থেকে ট্রলারে (ইঞ্জিনচালিত নৌকা) ১০ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিয়ে বাবুরচর ঘাট ও চরআত্রা ঘাট। এরপর চার কিলোমিটার হেঁটে বা অটোরিকশায় নওপাড়া ঘাটে পৌঁছাতে হয়। তারপর নওপাড়া-দীঘিরপাড় পদ্মার শাখা নদী পার হয়ে দুই কিলোমিটার ফসলি জমির পথ পেরিয়ে নওপাড়া পানসাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে যেতে হয়।

আরও পড়ুন

আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণ করার সময় নওপাড়া খেয়াঘাট থেকে পানসারা আশ্রয়ণ প্রকল্প পর্যন্ত ২ কিলোমিটার মাটির সড়ক নির্মাণের জন্য ২৩৭ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ চাওয়া হয়। ২০১৯ সালের মার্চে ওই বরাদ্দ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর প্রকল্প পরিচালকের কাছে চিঠি দেন নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। কিন্তু তখন ওই বরাদ্দ আর দেওয়া হয়নি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাওয়ার রাস্তা না থাকার কারণে সম্প্রতি আবার রাস্তা নির্মাণের বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়।

এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে যেতে হয় ফসলি জমির নিচু মাঠ দিয়ে। সেখানে যাওয়ার রাস্তা না থাকায় ভূমিহীন ব্যক্তিরা যেতে চাচ্ছে না। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে আপাতত একটি মাটির রাস্তা নির্মাণ করা। ওই রাস্তা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। তার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

নড়িয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নটি পদ্মার দুর্গম চরে অবস্থিত। তার চারদিক দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। নৌপথই ওই এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। সেই চরের পানসাড়া এলাকাটিতে জনবসতি কম। সেখানে আবাদি-অনাবাদি ফসলি জমি বেশি। ওই ফসলি জমির মাঠের মধ্যে খাসজমি ভরাট করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর ঘর নির্মাণ করে স্থানীয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে শরীয়তপুরে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাবেক সভাপতি আহসান উল্লাহ ইসমাইলি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অনন্য উদ্যোগ গৃহহীন ব্যক্তিদের জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেওয়া। যা মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাস্তবায়ন করেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার আগে ওই প্রকল্পের সুফল জনসাধারণ কীভাবে ভোগ করবে, তা–ও বিবেচনায় রাখতে হবে। নড়িয়ার দুর্গম চরের প্রকল্পটি দেখে মনে হচ্ছে দায়সারা গোছের কাজ হয়েছে। ঘর নির্মাণ করতে হবে, তাই করা হয়েছে। সেখানে কেউ থাকবে কি না, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

নড়িয়ার ইউএনও শেখ রাশেদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ভূমিহীন ব্যক্তিদের জন্য নির্মাণ করা প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর কোনো ঘর নষ্ট হলে তা মেরামত করা হবে। নওপাড়ার পানসারা প্রকল্পে মানুষ যাতে বসবাস করে, তার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সে জন্য রাস্তাসহ অন্য অবকাঠামো প্রয়োজন হলে তা–ও নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।