রংপুর মেডিকেলে ডায়ালাইসিস
যন্ত্রটি আছে, সব খরচ রোগীর
কম খরচে ডায়ালাইসিস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গরিব রোগীরা। ছয় মাসের বেশি সময় এভাবেই চলছে।
হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে ডায়ালাইসিসের যন্ত্র আছে, কিন্তু ডায়ালাইসিসের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু কিনতে হয় রোগীদের। ছয় মাসের বেশি সময় এভাবেই চলছে। এই অবস্থা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের কিডনি ইউনিটের। এতে সরকারি হাসপাতালে কম খরচে ডায়ালাইসিস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গরিব রোগীরা।
হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগ সূত্র জানায়, ৪৫ দিন ডায়ালাইসিসের শিডিউলের জন্য রোগীদের হাসপাতালে জমা দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। এই টাকায় পানি, সুচ, রক্ত, ক্যানুলাসহ আনুষঙ্গিক খরচ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ছয় মাসের বেশি সময় এসব উপকরণ সরবরাহ বন্ধ। ফলে রোগীদের এসব জিনিস বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একজন রোগীর একটি কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য সপ্তাহে দুই দিন সেবা নিতে হয়; অর্থাৎ মাসে আট দিন ডায়ালাইসিস করতে হয়।
আর দুটি কিডনির জন্য ডায়ালাইসিস করতে হয় সপ্তাহে ৪ দিন; অর্থাৎ মাসে ১৬ দিন। একটি কিডনির ক্ষেত্রে সপ্তাহে ২ দিন একজন রোগীর ডায়ালাইসিস করতে ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা খরচ পড়ে, যা মাসে দাঁড়ায় ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। দুটি কিডনির ডায়ালাইসিসে প্রতি মাসে এর দ্বিগুণ।
এ সম্পর্কে হাসপাতালের নেফ্রোলজি (কিডনি) বিভাগের প্রধান মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে সরকারি সাপ্লাই বন্ধ। রোগীদের সবকিছুই বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্প্রতি হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে দেখেও গেছেন। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছিলেন অবস্থার উন্নতি হবে। কিন্তু এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। রোগীরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
রুহুল আমিন (২৬) নামের এক রোগী চাকরি করতেন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়। কিডনি-সংক্রান্ত রোগের কারণে চাকরি ছেড়ে দেন। অভাব-অনটনের সংসার। ৩৫ শতাংশ আবাদি জমি ছিল। ২৮ শতাংশ ইতিমধ্যে বিক্রি করে রুহুলের কিডনি ডায়ালাইসিস চিকিৎসা করতে হয়েছে। এখন উপার্জনের কোনো পথ নেই। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে রুহুল বলেন, কত দিন এভাবে চলবে? ডায়ালাইসিস না করলে কাশি আর শরীর ব্যথায় ছটফট করে। বসতভিটাসহ আবাদি জমি ছিল ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে ২৮ শতাংশ আবাদি জমি বিক্রি করা হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে কিডনি ডায়ালাইসিসের চিকিৎসা করতে হয়েছে। এখন আর কোনো জমি নেই।
রুহুলের মতো আরও ১৬ জন রোগী হাসপাতালে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রংপুর নগরের নীলকণ্ঠ এলাকা বাসিন্দা আজিজার রহমান (৭০)। তাঁর ছেলে রেজাউল করিম বলেন, ‘বাবার একটি কিডনির ডায়ালাইসিস চলছে দুই মাস থেকে।
সপ্তাহে দুই দিন করে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করতে কোনো কিছুরই সাপ্লাই নেই। পানি, রক্ত, ক্যানুলা, সুচ, গজ–ব্যান্ডেজসহ সবকিছুই বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। এখানে শুধু যন্ত্রটি পাওয়া যায়। প্রতি সপ্তাহে দুই দিনে খরচ পড়ে প্রায় ৯ হাজার টাকা। মাসে ৩৬ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়ব।’
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার তৌহিদুল ইসলামের (২৮) একটি কিডনি ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে। তিনি আট মাস ধরে ডায়ালাইসিস করছেন সপ্তাহে দুই দিন। ডায়ালাইসিস শেষ করে বাড়ি যাওয়ার পথে তিনি বলেন, সপ্তাহে দুই দিনে সাড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। মাসে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। এরই মধ্যে বাড়ির আবাদি জমিও বিক্রি করা হয়েছে।
একইভাবে কথা জানালেন লালমনিরহাটের তুষভান্ডার এলাকার বুলু মিয়া (৫২)। তিনিও তিন বছর থেকে একটি কিডনি ডায়ালাইসিস করছেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ইউনুছ আলী বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।