ঢাকার সদরঘাটে নদীপথের যাত্রীদের চাপ বাড়ছে

সন্ধ্যার দিকে লঞ্চ ছাড়ার কথা থাকলেও যাত্রীরা আগেভাগেই এসে লঞ্চের ডেকে বসে আছেন। শনিবার দুপুরে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে
ছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা ও তার আশপাশ এলাকার কর্মজীবী মানুষ নদীপথে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। এতে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যার দিকে দক্ষিণাঞ্চলের রুটে লঞ্চ ছাড়ার কথা থাকলেও যাত্রীরা আগেভাগে ঘাটে এসে লঞ্চের ডেকে বসে আছেন। এ ছাড়া যাত্রী বহনের জন্য পর্যাপ্ত লঞ্চ টার্মিনালের পন্টুনে নোঙর করে রাখা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আজ ভোর পাঁচটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকা নদীবন্দরে যাত্রীবাহী লঞ্চ এসেছে ৫১টি। আর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে ৩২টি লঞ্চ।

ঝালকাঠিগামী এমভি সুন্দরবন লঞ্চের যাত্রী রোকন উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা সাতটায়। যানজট এড়ানোর জন্য দুপুর ১২টার দিকে সদরঘাটে চলে এসেছি। এসে দেখি লঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে লোকজন বসে আছে। উপায় না পেয়ে লঞ্চের এক পাশে পাটি বিছিয়ে বসেছি। কী আর করব। বাড়ি তো যেতেই হবে।’

বরিশালগামী এমভি শুভরাজ লঞ্চের যাত্রী আলী আক্কাস বলেন, যানজটের কারণে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড় থেকে সদরঘাটে আসতে ঘণ্টাখানেক সময় লেগেছে। সড়কের পাশে ফুটপাত দখল করে হকাররা মালামাল বিক্রি করছেন। এতে সড়ক দিয়ে চলাফেরা করতে সমস্যা হচ্ছে। সরকারের এসব বিষয় দেখা উচিত।

সদরঘাট টার্মিনাল এলাকা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌ পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন।

পিরোজপুরের হুলারহাটগামী এমভি যুবরাজ লঞ্চের কর্মচারী শরীফ মিয়া বলেন, আগে ঈদ মৌসুমের এ সময়ে লঞ্চের ডেকে যাত্রী বসার জায়গা থাকত না। যাত্রীদের ভিড়ে ডেক দিয়ে হাঁটার পথ থাকত না। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে আগের সেই অবস্থা নেই। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লঞ্চের ভাড়া কমিয়েছি। সরকার নির্ধারিত হারেই ভাড়া নিচ্ছি। এরপরও আগের মতো সেই যাত্রী আর নেই।’

লঞ্চমালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান ও এমভি কুয়াকাটা লঞ্চের মালিক মো. আবুল কালাম বলেন, ‘আজ পটুয়াখালী রুটে আমাদের লঞ্চের একটি ট্রিপ আছে। বর্তমানে যাত্রী তেমন হচ্ছে না। আগামীকাল কিংবা পরশু গার্মেন্টস ছুটি হলে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে।’ তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ঈদ মৌসুমে লঞ্চে তেমন যাত্রী হয় না। একসময় টার্মিনাল এলাকায় যাত্রীদের চাপে চলাফেরা করা মুশকিল ছিল। তিল ধারণের ঠাঁই থাকত না। কিন্তু সেই দিন আর ফিরে আসবে না।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, নদীপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। টার্মিনালে যাত্রী উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হবে। কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও যাত্রী হয়রানি বরদাশত করা হবে না।

নৌ পুলিশ সদরঘাট থানার পরিদর্শক আবুল কালাম বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও যাত্রী হয়রানি রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক হকারমুক্ত করতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সদরঘাট টার্মিনাল এলাকা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌ পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও কাজ করছেন।