কাঁচা মরিচ হঠাৎ এত ‘ঝাল’ ছড়াচ্ছে কেন
গত এক সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। বিভিন্ন জেলার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রান্নার অতি প্রয়োজনীয় উপকরণটি কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
হঠাৎ করে কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার দুটি কারণ বলেছেন ব্যবসায়ীরা। এর একটি হলো—এ বছর বর্ষা দীর্ঘ হওয়ায় বেশির ভাগ মরিচখেতে পানি জমে গাছ পচে গেছে। ফলে সেভাবে মরিচের উৎপাদন হয়নি। এ কারণে দাম বাড়তি। আরেকটি কারণ হলো, দুর্গাপূজার কারণে ভারত থেকে মরিচের আমদানি বন্ধ আছে। এ কারণে দাম বেড়েছে। মরিচের বাড়তি দামের কারণে ক্রেতারাও এখন রয়েসয়ে কিনছেন।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি সবজি বাজার মেছুয়া বাজার। সেখানে আজ খুচরা হিসাবে কেজিপ্রতি ৩২০ টাকায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে। বাজারের আড়তদার মো. রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গার মরিচ এখন বাজারে। দুর্গাপূজার কারণে সীমান্তে আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ। ফলে বাজারে মরিচের সংকট দেখা দিয়েছে। তাঁর আড়তে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার কেজি মরিচের চাহিদা আছে। কিন্তু তিনি পাচ্ছেন এক হাজার কেজি মরিচ। দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তারা প্রয়োজনের তুলনায় কম নিচ্ছেন। এভাবেই চাহিদা মিটছে।
মেছুয়া বাজারের আরাফাত হোসেন শিপু ট্রেডার্সে কাজ করেন জাফর ইকবাল। কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দুর্গাপূজার কারণে ভারতীয় কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ ছিল। সে কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে উত্তরবঙ্গের মরিচ দিয়ে বাজার চলছে। শীতকালে ময়মনসিংহে মরিচের অভাব থাকে না। তখন ৩০-৪০ টাকা কেজি হয়ে যায়। বর্তমানে ময়মনসিংহের মরিচ বাজারে নেই। স্থানীয় মরিচ থাকলে বাজারে এমন দাম বাড়ত না।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জুবায়রা বেগম বলেন, বর্তমান সময়ে যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, পাঁচ বছর আগে এমন সময়ে এ পরিমাণ বৃষ্টি হতো না। বৃষ্টিতে ক্ষতির কারণে কৃষকদেরও নিরুৎসাহিত করা হয়। বৃষ্টি শেষে নতুন করে মরিচ চাষ শুরু হবে।
রাজশাহী
রাজশাহী নগরের অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার মাস্টারপাড়া মণিচত্বর। খুব ভোর থেকেই এখানে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সবজি আসে। ভোরে পাইকারি ও পরে খুচরা বিক্রি শুরু হয়। আজ শনিবার সকালে এই বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মরিচের দাম প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। মাত্র চার দিন আগেও এই মরিচের দাম ছিল প্রতি কেজি ১৫০ টাকা। বাজারে ৩০ টাকার মরিচ কিনছিলেন এক ক্রেতা। মরিচগুলো হাতে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখানে হয়তো ৩০ টাকায় ৩০টি মরিচও নেই। হঠাৎ করে দাম অনেক বেড়ে গেছে।
মাস্টারপাড়া মণিচত্বর বাজারের ব্যবসায়ী আবদুস সোবহান বলেন, মরিচখেতে মরিচ নেই। বেশির ভাগ মরিচখেতে পানি জমে পচে গেছে। এ কারণে দাম বাড়তি।
যশোর
যশোরের কেশবপুরে কাঁচা মরিচ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অতিবৃষ্টিতে মরিচ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবং ভারত থেকে মরিচ আমদানি না হওয়া দাম বাড়ার কারণ বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ কেশবপুর উপজেলা সদরে হাটের দিনে কাঁচা মরিচ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাঁদপুর
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় আজ সকালে বাজারে ৪০০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়। সকাল ১০টার দিকে উপজেলা সদরের কাঁচা তরকারির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাত্র তিনজন বিক্রেতার কাছে সামান্য কিছু কাঁচা মরিচ ডালায় সাজানো। দাম চড়া হওয়ায় বেচাবিক্রি নেই তেমন। কয়েকজন ক্রেতাকে দরদাম করেই ফিরে যেতে দেখা গেছে। তবে দু-একজন ক্রেতা চড়া মূল্যেই অল্প পরিমাণে কিনছেন কাঁচা মরিচ।
ওই বাজারে আসা উপজেলার কলাদী এলাকার এক গৃহবধূ বলেন, জরুরি প্রয়োজনে ১০০ টাকায় ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনেছেন। দাম না কমলে আর কিনবেন না। হঠাৎ কাঁচা মরিচের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় তিনিসহ অন্যান্য ক্রেতারা হতাশ।
উপজেলা সদর বাজারের কাঁচা তরকারি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন ও মো. আল-আমিন বলেন, দুদিন ধরে বাজারে কাঁচা মরিচ তেমন আসছে না। সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়ে গেছে অনেক। এ জন্য বেচাবিক্রিও নেই তেমন। ক্রেতারা কাঁচা মরিচের দাম শুনেই ভ্রু কুঁচকে চলে যান।
কুষ্টিয়া
তিন দিন আগে গত বুধবার কুষ্টিয়া পৌরবাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা দরে। আজ সকালে একই মরিচ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০০ টাকা।
আজ বিকেলে পৌর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী ইনসান আলী প্রথম আলোকে বলেন, মরিচের আমদানি কম। আজ মাত্র ৬ কেজি কিনেছেন। প্রতি কেজি কিনেছেন ২৮০ টাকা দরে। বিক্রি করছেন ৩২০ টাকা দরে। কত দিন এই দাম থাকবে তা বলতে পারেন না।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামের মাঠে প্রচণ্ড রোদে মরিচখেতে গাছ পুড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার ভ্যাপসা গরমের পর বৃষ্টি হচ্ছে। এবার বৃষ্টির পরিমাণও বেশি। এতেও গাছ মরে যাচ্ছে। কাঁচা মরিচ কম উৎপাদন হচ্ছে। এটা আরও কয়েক দিন থাকতে পারে।