পঞ্চগড়ের দুটি আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তফসিল ঘোষণার আগে জেলা শহরসহ পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার, পথে-প্রান্তরে ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে ছেয়ে গিয়েছিল। চলছিল উঠান বৈঠক, গণসংযোগ, মিটিং-মিছিলসহ নানান প্রচারণা। তবে তফসিল ঘোণার পর প্রকাশ্যে এসব প্রচারণা প্রায় বন্ধ হয়েছে। প্রার্থীরা নিজ নিজ জায়গা থেকে মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন।
১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত পঞ্চগড়-১ এবং ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত পঞ্চগড়-২ আসন ধরে রেখেছিল বিএনপি। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুটি আসনেই জেতে আওয়ামী লীগ। কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির অনুপস্থিতিতে পঞ্চগড়ের রাজনীতির মাঠে ভিন্ন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। আসন্ন নির্বাচন আসন দুটিতে জয় পেতে চায় বিএনপি। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে তৎপর জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনিসিপি)। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টিসহ (জাগপা) বেশ কয়েকটি দলের প্রার্থীরাও নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পঞ্চগড়-১ (সদর, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া)
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমির আসনটিতে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারের ছেলে। বাবার পথ ধরে সংসদে যেতে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় গণসংযোগ করে আসছেন নওশাদ জমির।
পঞ্চগড় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ মজিদ বলেন, নওশাদ জমির যেখানেই যাচ্ছেন মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। কারণ, এই জেলায় যত উন্নয়ন দেখা যায়, তার সবই হয়েছে জমির উদ্দিন সরকারের হাত দিয়ে। নওশাদ জমির নির্বাচিত হলে তিনিও তাঁর বাবার সেই উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন।
এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী দলের জেলা আমির ইকবাল হোসাইন। তিনি তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনিও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করছেন।
ইকবাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ায় এখন আচরণবিধির আলোকে মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছি। যেখানেই যাচ্ছি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে মানুষের ব্যাপক সাড়া এবং সমর্থন পাচ্ছি, যা আমাদের কল্পনার বাইরে।’ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী বলেও জানান তিনি।
এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত এনসিপির প্রার্থী দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি পঞ্চগড়ে তাঁর দল ও দলের অঙ্গ-সহযোগী গঠনের পাশাপাশি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। সারজিস আলম বলেন, মানুষের কাছে গিয়ে তিনি শিশু থেকে বৃদ্ধ—সব বয়সী মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। এত দিন পত্রিকা-টেলিভিশন আর মুঠোফোনে যাঁকে দেখেছেন, তাঁকে সরাসরি দেখতে পেয়ে সবাই সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন বলে তিনি জানান। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা শাখার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. আবদুল্লাহ, গণ অধিকার পরিষদ জেলা শাখার আহ্বায়ক মাহাফুজার রহমান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ জাসদের (আম্বিয়া-নাজমুল) সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, জাকের পার্টির জেলা শাখার আইনবিষয়ক সম্পাদক আনিছুর রহমান, খেলাফত মজলিসের পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি মীর মোর্শেদ তুহিন, গণসংহতি আন্দোলন পঞ্চগড় জেলা শাখার আহ্বায়ক সাজেদুর রহমান নির্বাচনে প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পঞ্চগড়-২ (বোদা ও দেবীগঞ্জ)
১৯৯৬ সালের সপ্তম এবং ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-২ আসনে বিজয়ী হন বিএনপি-মনোনীত প্রার্থী মোজাহার হোসেন। এরপর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে তিনি পরাজিত হলে এই আসন হারিয়ে ফেলে বিএনপি।
এই আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ও জেলার সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ। প্রায় ১৭ বছর আগে ‘হারিয়ে ফেলা’ আসনটি পুনরুদ্ধারে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তিনি। ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এবার বিএনপিতেই আস্থা খুঁজছেন ভোটাররা। গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাধারণ ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’ ভোটে এবার বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার দেখা যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
এদিকে আসনটিতে জামায়াতে ইসলামী থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সফিউল আলম (সফিউল্লাহ সুফি)। তিনি বোদা উপজেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য এবং বোদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। সফিউল আলম বলেন, ‘এবার মানুষ ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য জামায়াতে ইসলামীকেই বেছে নেবে। এর আগে ২০১৪ সালে আমি বোদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। আমার সততা ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বিবেচনা করে মানুষ আমাকে ভোট দিতে চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’
এ ছাড়া এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের কামরুল হাসান প্রধান, গণ অধিকার পরিষদের আসাদুজ্জামান নুর, বাংলাদেশ জাসদের (আম্বিয়া-নাজমুল) এমরান আল আমিন, এনসিপির শিশির আসাদ, জাকের পার্টির মো. শাহ আলম এবং খেলাফত মজলিসের আবুল কাশেম নির্বাচনে প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।