গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়কদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী শরিফুল ইসলামকে ধরে পুলিশে দিতে গেলে তাঁর বন্ধুরা তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে যানছবি: সংগৃহীত

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করে পুলিশে দেওয়ার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সমন্বয়কদের ওপর হামলার ঘটনায় আজ রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল জামান ফাহিম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানার এ মামলা করেন তিনি। ছাত্রলীগ কর্মী শরিফুল ইসলামকে (সোহাগ) এ মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে।

মামলার উল্লেখযোগ্য অপর আসামিরা হলেন ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের সাইদুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান, মো. ফাহাদ্দেস আলী পিয়াস, সাজিদ হাসান, জিল্লুর রহমান রাফিন, মোস্তাকিমুর রহমান শান্ত, এনামুল হক, জুয়েল রানা, বিপ্লব খান, দেলোয়ার হোসেন, আবদুল্লাহ ও মো. হারুন।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার দুই সমন্বয়ক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ প্রকৌশল অনুষদের ডিন আবদুল্লাহ আল আসাদকে প্রধান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে জণসংযোগ অধিদপ্তরের পরিচালক মাহাবুবুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সদস্যসচিব শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সাহাব উদ্দিন, সদস্য ইতিহাস বিভাগের সভাপতি আতিকুজ্জামান ভূঁইয়া, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শামচুল আরেফিন, সহকারী প্রক্টর আইরিন পারভীন, মো. আসিফ খাদেল এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের সহকারী পরিচালক ওহিদুল ইসলাম। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে রেজিস্ট্রারের দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ তদন্ত সেলে পাঠানো হবে বলে জানা যায়।

তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে সহকারী প্রক্টর মুজাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হামলার ঘটনায় গতকাল রাতে প্রক্টরিয়াল বডির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরে এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের কর্মী শরিফুল ইসলাম গতকাল সকালে পরীক্ষা দিতে এলে শিক্ষার্থীরা তাঁকে আটক করেন। তখন শরিফুলের অনুসারী সাইদুল, দেলোয়ার, সানজিদসহ ছাত্রলীগের কিছু কর্মী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে তাঁকে ছিনিয়ে নেন। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। হামলায় কৃষিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ক্যাম্পাসে নেতৃত্ব দেওয়া অন্যতম সমন্বয়ক জসিম উদ্দিন এবং আরেক সমন্বয়ক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর শরীফ আহত হন।

এ ছাড়া হামলার ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত সাংবাদিক রাসেল হোসেন ও আতিক ফয়সাল আহত হন। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের কর্মী শরিফুল ইসলাম হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁকে (শরিফুল) আটকে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁর সহপাঠীরা তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে বের করে দেন। তাঁরা কোনো হামলা করেননি।
শরিফুল ইসলাম ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তিনি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিরোধিতাসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করেছিলেন বলে অভিযোগ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের।