বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়ে নিখোঁজ, পাঁচ মাস পর ফিরলেন কঙ্কাল হয়ে

শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র

শরীয়তপুর শহরের পালং বাজারের একটি মাংস বিক্রির দোকানে শ্রমিক ছিলেন রাকিব হোসেন মোল্যা (২৩)। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। ৫ মাস ১০ দিন পর একটি বিল থেকে তাঁর কঙ্কাল (দেহাবশেষ) উদ্ধার করেছে পুলিশ। গায়ের জার্সি দেখে লাশ শনাক্ত করেছে পরিবার। ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পর আজ বুধবার সন্ধ্যায় তাঁকে দাফন করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, নিহত রাকিব সদর উপজেলার পালং ইউনিয়নের নরবালাখানা গ্রামের নুরুল ইসলাম মোল্যার ছেলে। গত ১৭ এপ্রিল বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি আর ফিরে আসেননি। কোথায়ও খুঁজে না পেয়ে পরিবার ১৯ এপ্রিল পালং মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে।

এরপর ৫ মে পালং মডেল থানায় তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করা হয়। পুলিশ মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। তাঁদের মধ্যে দুজন জামিনে আছেন আর একজন কারাগারে আছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বিলাশখান বিলে পাখি শিকারে যায় কয়েকটি শিশু-কিশোর। তারা একটি জার্সির কিছু অংশ ভেসে থাকতে দেখে তা তুলে নেয়। তখন জার্সির সঙ্গে মানুষের হাড় দেখতে পেয়ে তারা চিৎকার দেয়। পরে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ওই লাশের দেহাবশেষ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। দেহাবশেষের সঙ্গে থাকা জার্সি দেখে নিখোঁজ রাকিবের স্বজনেরা তা রাকিবের লাশ বলে শনাক্ত করেন। আজ ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পর লাশ হস্তান্তর করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাকিব নিখোঁজ হওয়ার সময়ই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তাঁর লাশ বিলের মাটিতে চাপা দেওয়া হয়েছিল। শরীরের হাড়গোড় খুলে গেছে। মাথা আলাদা হয়ে গেছে। ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা রাখার পর দেহাবশেষ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সন্ধ্যায় নরবালাখানা মসজিদ প্রাঙ্গণে রাকিবের দেহাবশেষ দাফন করা হয়েছে। রাকিবের বাবা নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ নেই। ছেলের সঙ্গেও বিরোধ ছিল না। তাহলে কেন আমার ছেলেকে হত্যা করা হলো? চিরবিদায়ের সময় ছেলের মুখটাও দেখতে পেলাম না। ওর হাড়গোড় দেখে তার মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে। আমরা তাকে সান্ত্বনা দিতে পারছি না। আমাদের আশা ছিল ছেলে হয়তো ফিরে আসবে। ছেলে এসেছে কঙ্কাল হয়ে। যারা ওকে অপহরণ করে হত্যা করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি চাই।’

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ওই তরুণের নিখোঁজের ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। মামলাটিই এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। কী কারণে, কীভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, সে ব্যাপারে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। শিগগিরই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটিত হবে।