অস্ত্রোপচারের আগে দেওয়া স্যালাইন পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলো ঢাকায়

রাজশাহী জেলার মানচিত্র

রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মের পর দুই প্রসূতির মৃত্যুর ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগে দুটি প্রতিবেদন দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদন ওই মায়েরা অস্ত্রোপচারের আগে দেওয়া স্যালাইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মারা গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। ওই স্যালাইন পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

আজ শনিবার রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আনোয়ারুল কবীরের কাছে প্রতিবেদন দুটি দেয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আনোয়ারুল কবীর প্রতিবেদন পাওয়া ও পরীক্ষার জন্য ঢাকায় স্যালাইন পাঠানোর বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

আনোয়ারুল কবীর প্রথম আলোকে বলেছেন, অস্ত্রোপচারের আগে ওই নারীদের আইভি ফ্লুইড স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তাঁদের কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। এভাবে দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আরেক নারীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কয়েক দিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে কীভাবে দুই মায়ের মৃত্যু হলো, তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজশাহীর দুর্গাপুরের প্রসূতি আসমা খাতুনকে (৩৮) ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ১৯ মার্চ। সেদিনই স্যালাইন দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের পর অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই রাতেই তিনি মারা যান। নওগাঁর নিয়ামতপুরের প্রসূতি শারমিন খাতুনকে (৩৫) ভর্তি করা হয় ১৬ মার্চ। স্যালাইন দেওয়ার পর তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। একই ধরনের সমস্যায় তাঁকেও রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়। ২৫ মার্চ তিনি মারা যান। আরবী খাতুন (১৯) নামের এক প্রসূতিরও একই ধরনের সমস্যা হয়েছিল। তবে তিনি চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আনোয়ারুল কবীর বলেন, গতকাল শুক্রবার বিষয়টি জানার পর হাসপাতাল থেকে প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। তাঁরা আজ দুটি প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রতিবেদনে তাঁরা ধারণা থেকে আইভি স্যালাইনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলেছেন। এ জন্য স্যালাইন পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষায় প্রমাণিত হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা ঠিক হবে না। পরীক্ষায় স্যালাইনের সমস্যা থাকলে কোম্পানির সঙ্গে কথা হবে। আর স্যালাইনের সমস্যা না হলে আরও অনুসন্ধান করতে হবে।

আনোয়ারুল কবীর আরও বলেন, ‘এ রকম ঘটনা দেশের অন্য জায়গায়ও ঘটেছে। রাজশাহীতে এই প্রথম জানতে পেরেছি। যেহেতু স্যালাইন দেওয়া ও সিজারের পরে একই ধরনের সমস্যায় রোগী মারা যাচ্ছে, তাই বিষয়টি আমাদের আগেই জানানো দরকার ছিল। তাহলে আগে থেকে কাজ শুরু করা যেত।’

এ ঘটনায় ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান চিকিৎসক আবু বকর সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আশা করি সোমবার আমরা কাজ শেষ করতে পারব। তারপর প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’ স্বাস্থ্য বিভাগকে না জানানোর বিষয়ে বলেন, ‘প্রসূতিরা আমাদের এখানে ভর্তি হলেও রাজশাহী মেডিকেলে মারা গেছেন। সেখান থেকে প্রতিবেদন দেবে ভেবে হয়তো কিছু জানানো হয়নি। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস। সে জন্য তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। স্যালাইনেরও পরীক্ষা করা হচ্ছে।’