কৃষকদের প্রণোদনার সার–বীজ আত্মসাৎ 

পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, অধিকাংশ নাম ও মুঠোফোন নম্বর ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনের।

পাবনার সুজানগর উপজেলার বিনা মূল্যে বিতরণের সার ও বীজ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকেরা। বিতরণের তালিকায় দেখা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনের নাম ও মুঠোফোন নম্বর রয়েছে। 

 উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০টি ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার কৃষকের জন্য উন্নতজাতের পেঁয়াজ, গম, ধান, ভুট্টা, শর্ষে, মুগ ও খেসারি বীজ এবং এসব ফসল উৎপাদনের জন্য সার বরাদ্দ দেওয়া হয়। কৃষকদের জমি বিবেচনায় বীজের বরাদ্দ ছিল ১ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত। সারের বরাদ্দ ছিল ২০ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত। উপজেলা পরিষদ থেকে এই সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ কমিটির সভাপতি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সদস্যসচিব ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। ইউনিয়ন পর্যায়ে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে কৃষকদের তালিকা তৈরি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যানরা।

পাঁচটি ইউনিয়নের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, অধিকাংশ নাম ও মুঠোফোন নম্বর ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনের। তালিকায় দু-চারটি নাম ভিন্ন থাকলেও মুঠোফোন নম্বর সঠিক নেই। আবার অন্য কারও নামের পাশে আরেকজনের নম্বর। তালিকায় দু-একজন কৃষকের নাম ও নম্বর ঠিক থাকলেও তাঁরা সার-বীজ বিতরণের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন।

হাটখালী ইউপিতে ২৫ জন কৃষকের একটি তালিকায় দেখা গেছে, খোদ চেয়ারম্যানের মুঠোফোনের নম্বর আছে দুজনের নামের পাশে। তাঁর দুই ভাইয়ের নামসহ আরও পাঁচজন আত্মীয়ের নাম আছে তালিকায়। বাকি নাম ও মুঠোফোন নম্বর ইউপি সদস্যদের।

হাটখালী ইউপির চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ খান বলেন, ‘তালিকা আমরাই করেছি। এখানে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। তাড়াহুড়ো করে তালিকা করে দেওয়ার জন্য যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তবে আমার নম্বর কীভাবে গেল আমি জানি না। আর আমার ভাইয়েরা যদি কৃষক হোন, তাহলে তালিকায় তাঁদের নাম থাকা তো দোষের কিছু নয়।’

ইউপি সদস্যদের নাম থাকার বিষয়ে ফিরোজ আহম্মেদ খান বলেন, দ্রুত তালিকা তৈরি করতে গিয়ে কিছু নাম এদিক-ওদিক হতে পারে। 

ভায়না ইউনিয়নের ১৫ জনের একটি তালিকার সবাই ইউপি সদস্য। মানিকহাট ইউনিয়নের ২৫ জনের একটি তালিকায় ৪ জনের নামের পাশে চেয়ারম্যানের নম্বর আছে। একটি নাম ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও বাকিগুলো সদস্যদের নাম ও মুঠোফোন নম্বর। আহম্মদপুর ইউনিয়নের ১৫ জনের একটি তালিকায় ১০ জনই ইউপি সদস্যদের আত্মীয়, অন্যদের নম্বর ভুল। দুলাই ইউনিয়নের ১০ জনের তালিকায় ৮ জনই ইউপি সদস্যদের আত্মীয়।

মানিকহাট ইউপির চেয়ারম্যান শফিউল ইসলাম বলেন, সার-বীজ বিতরণে অনিয়ম করা হয়নি। কোনো কৃষক কোনো অভিযোগও করেননি। তালিকায় দু-একজন সদস্যের নাম থাকলেও তাঁরা সার-বীজ এনে কৃষকদেরই দিয়েছেন। 

তবে এসব ইউনিয়নের ১০ জন প্রান্তিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা এই প্রণোদনার সার-বীজের বিষয়ে কিছু জানেন না। কোনো কৃষক এমনটি পেয়েছেন তা–ও তাঁরা কেউ শোনেননি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাফিউল ইসলাম বলেন, প্রথমে ইউনিয়ন থেকে তালিকাটি তৈরি করা হয়। এরপর উপজেলা কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদনের পর সার ও বীজ বিতরণ করা হয়। তাঁরা এ বিষয়ে এখনো কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাননি। যদি অভিযোগ আসে, তাহলে তদন্ত করে দেখবেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।