শরীয়তপুরে ৫ বছরে আলুর উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ

এ বছর প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ১৩ টাকা ৫০ পয়সা।

জমি থেকে আলু তুলছেন কিষানিরা। গত বুধবার শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা ইউনিয়নের বোরকাঠি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরে আলুর উৎপাদন প্রতিবছর বাড়ছে। কৃষক যে জমিতে ধান ও পাট আবাদ করেন, তার মধ্যেই আলুর আবাদ করছেন। গত ৫ বছরে জেলায় আলুর উৎপাদন দ্বিগুণের কাছাকাছি বেড়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় জেলার কৃষকেরা আলুর আবাদে ঝুঁকছেন। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে লাভ হওয়ায় তাঁরা খুশি।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ১৩ টাকা ৫০ পয়সা। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর কৃষক পাইকারের কাছে বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে।

কৃষকেরা জানান, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্থানে আলুর আবাদ করা হয়। আর ফেব্রুয়ারি থেকে কৃষকেরা আলু তুলতে শুরু করেছেন। মার্চ মাসজুড়ে আলু তুলবেন কৃষকেরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় আলুর আবাদ করা হয়েছিল ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৪১ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে আবাদ করা হয়েছিল ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে আবাদ করা হয়েছিল ১ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৫৩ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ করা হয়েছিল ২ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ৭৪ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। এ মৌসুমে (২০২৩-২৪ অর্থবছর) শরীয়তপুরে ২ হাজর ৭২৬ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ তাতে ৭৭ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত ৫ বছরে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৫ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন (৮৫ শতাংশ)। আর আবাদ বেড়েছে ১ হাজার ১৭৬ হেক্টর জমিতে (৭৬ শতাংশ)।

কৃষি বিভাগ ও কৃষকেরা জানান, নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলে আলুর আবাদ করা হয় বেশি। বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ও শ্রমিক বাবদ প্রতি শতক জমিতে কৃষকের খরচ হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। আর উৎপাদন হয়েছে ১১০ কেজি থেকে ১১৫ কেজি।

নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের পানসারা এলাকার কৃষক আবদুল হাই সরদার এক একর জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। তিনি জমির সব আলু তুলে ১১ টন আলু মুন্সিগঞ্জের একটি হিমাগারে রেখেছেন। আবদুল হাই সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে এ বছর খরচ হয়েছে ১৫ টাকা। ৫ বছর ধরে কিছু লাভ হচ্ছে। তার আগের বছরগুলোতে উৎপাদন খরচ বা তার কমে বিক্রি করতে হয়েছে। এবার হিমাগারে আলু রেখেছি। দাম আরও বাড়বে, তখন বিক্রি করব।’

ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের বোরকাঠি এলাকার কৃষক বোরহান উদ্দিন দেওয়ান তাঁর ৫০ শতক জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। সেখান থেকে ৫ টন আলু পেয়েছেন। প্রতি টন ২০ হাজার টাকা দরে সব আলু বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতি টনে তাঁর ৬ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। বোরহান উদ্দিন দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আলুর দাম পেতাম না। উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে আবাদ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখন আলুর দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে, তাই লাভ হচ্ছে। এখন আবার আলুর আবাদ শুরু করেছি।’

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রবীআহ নূর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক বছর ধরে আলুর দাম বেড়েছে। ভালো দাম পেয়ে কৃষক আলুর আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষক যে জমিতে ধান ও পাট আবাদ করেন, তার মধ্যেই আলুর আবাদ করছেন।